কোন তথ্য না জানলে আপনি সঙ্গে সঙ্গে গুগলে অনুসন্ধান করেন। গুগল আর ইন্টারনেট সঙ্গে থাকলে আর পিছিয়ে পড়ার ভাবনা নেই। কিন্তু খেয়াল করেছেন গুগলের লোগোতে কি কি রঙ থাকে? না মনে করতে পারলে এখুনি দেখুন। ‘গুগল’ শব্দটি লেখা আছে চারটি রঙের সমন্বয়ে-নীল, লাল, হলুদ এবং সবুজ।
এই রঙগুলোর কি কোন বিশেষত্ব আছে? কেন এই চারটি রঙ ব্যবহার হয় গুগলের লোগোতে?
অনেকে বলেন এটি নিছকই কাকতালীয় বিষয়, কারণ লাল নীল হলুদ সবুজ চারটি সাধারণ রঙ যা শুরুতেই মনে পরে। ১৯৯৮ সালে গুগল সার্চইঞ্জিন যখন ঘোষিতভাবে চালু হল অনেকের মতে সেটি নিয়ে আবিষ্কর্তা ল্যারি পেজের তেমন উচ্চাশা ছিলনা। তাই যেকোনো চারটি রঙ দিয়ে লিখে একটা হালকা চালে লোগো বানিয়ে নেন।
কিন্তু সত্যিই কি তাই? আসুন জেনে নিই গুগলের লোগোতে ব্যবহৃত রঙ নিয়ে কিছু কথা।
১। গুগলের লোগো পৃথিবীর সর্বাধিক পরিচিত লোগোগুলোর একটি। কোন বিশেষ ঘটনা বা দিনের ঐতিহাসিক গুরুত্ব অনুসারে ওয়েবসাইটের হোমপেজে গুগল লোগো প্রায়ই বদলাতে দেখে থাকবেন। এছাড়াও প্রতিবছরই সামান্য হলেও বদলায় এই লোগোর নক্সা।১৯৯৭ সালের পর থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে বেশ কয়েকবার সূক্ষ্ম পরিবর্তন করা হয়েছে ‘গুগল’ লেখাটির ধরন এবং সজ্জার। কিন্তু বদলায়নি সেই চারটে রঙের ব্যবহার, কেবল ক্রম বদলেছে দু-একবার।
২। রুথ কেদার নামের একজন আমেরিকান গ্রাফিক ডিসাইনার গুগলের লোগোটি তৈরি করেন। একজন ভালো আর্টিস্ট মাত্রেই বুঝবেন লোগোতে সঠিক রঙ নির্বাচন করা কতটা জরুরী।বিশেষ করে যে লোগোর মধ্যে থাকবে গুগলের মতো বিপুল এক সংস্থার পরিচিতি।অতএব, যাতে সবার নজর কাড়তে পাড়া যায় এমন রঙের ব্যবহারই তো থাকবে গুগলের লোগোতে, এতে আর আশ্চর্য কি!
৩। রঙ চারটি সাধারণ এবং সবথেকে উজ্জ্বল।রঙের নক্সার ক্ষেত্রে মূল কথা হল চোখেও পড়বে সেইসঙ্গে নান্দনিক বৈশিষ্ট্য বজায় রেখে ছবির নিহিত অর্থ মানুষের কাছে পৌঁছে দেবে।চারুকলার এই বিজ্ঞান মাথায় রেখেই গুগলের লোগোটি বানানো। রুথ, যিনি এই লোগো বানিয়েছেন, তাঁর কথা হল-এত রঙ থাকতে গুগলের লোগোর জন্য এই চারটে প্রাথমিক রঙই তাঁরা বেছে নিয়েছেন।কিন্তু গ্রাফিক ডিসাইনের বিজ্ঞানসম্মত রঙের ক্রম অনুযায়ী সাজাননি। গুগল-এর ‘এল’ অক্ষরে সবুজ অর্থাৎ একটি গৌণ রঙ রেখে এটাই বোঝাতে চেয়েছেন যে গুগল সবসময় কিন্তু নিয়ম মেনে চলেনা।
৪। শুনতে অদ্ভুত লাগলেও রঙের ক্রম সাজানোর বিজ্ঞানে রয়েছে অবস্থানগত সংখ্যার গুরুত্ব। ‘গুগল’ শব্দের ছটি অক্ষরের মধ্যে ১, ২, ৩ ও ৫ নম্বর স্থানে রয়েছে প্রধান রঙ চারটি। আর ৪ এবং ৬ অর্থাৎ যৌগিক সংখ্যাগুলোর স্থানে রয়েছে পুনরাবৃত্ত শুরুর রঙের ক্রম- প্রথমে নীল, তারপর লাল।
৫। চারুকলায় তিনটি প্রাথমিক রঙের অস্তিত্বের কথা বলা হয়েছে- নীল, লাল এবং হলুদ। গুগলের শুরুর তিনটি অক্ষরেও যা অনুসরণ করা হয়েছে। তবে সবুজ রঙ কেন?কারণ, ডিজিটালি কোন কিছু তৈরির সময় প্রাথমিক রঙের ক্রম একটু আলাদা। আমাদের চোখের সুবিধের জন্যই ডিজিটাল রঙের ক্ষেত্রে আলোর রঙের স্কেল ধরা হয়, যেখানে ‘আর-জি-বি’ বা রেড, গ্রিন, ব্লু হল প্রাথমিক রঙ। গুগলের লোগোটি আবার খেয়াল করলে দেখবেন এই দুরকম স্কেলের ক্রম সমন্বিত করেই রঙের বিন্যাস করা হয়েছে। তাই শেষ তিনটি অক্ষরের রঙের ক্রম- লাল, সবুজ ও নীল।
তাহলে, বুঝতেই পারছেন রঙগুলি ব্যবহারের পেছনে রয়েছে গভীর বৈজ্ঞানিক যুক্তি এবং সেইসঙ্গে নান্দনিক বিচারও। ক্রম অনুযায়ী আরেকবার দেখা যাক-
G = blue
o = red
o = yellow
g = blue
l = green
e = red
বলা বাহুল্য, লাল দিয়ে শুরু করা হয়নি দেখতে খারাপ লাগবে বলেই।এছাড়াও গুগলের লোগোয় মিশে আছে শুরুর পথ চলার দিনের গল্প।গুগলের প্রথম সার্ভার যে তাকটায় রাখা থাকত সেটি খেলনা লেগোর ইট দিয়ে বানানো ছিল। খরচ বাঁচানোর জন্য দশটা ৪ জিবি হার্ডড্রাইভ লেগোমহলেই সুরক্ষিত রাখা হয়েছে দীর্ঘদিন।লেগোর টুকরোগুলোর রং সেই লাল, নীল, হলুদ, সবুজই হতো তখন। সেই তাৎপর্য অনেকের মতে গুগলের লোগোতেও প্রতিফলিত হয়েছে।
কেবল গুগল নয়, প্রাথমিক রঙের ব্যবহারে তৈরি অনেক বিখ্যাত কোম্পানির লোগো জনপ্রিয় হয়েছে, যেমন- মাইক্রোসফট, ইবে, এন বি সি, পিকাসা স্টুডিও এমনকি অলিম্পিকের নকশাতেও রয়েছে এই চারটি রং।কারণ আর কিছুই নয়, আপনি মনে রেখেছেন চোখে পড়েছে বলেই।প্রসঙ্গত, আপনার নিশ্চয়ই মনে পড়েছে এতক্ষনে; বলুন তো আমাদের সকলের প্রিয় ইনডোর গেম লুডোর ঘুটির ঝকঝকে রং গুলো কি কি?
আপনার যদি আরও কোন বিখ্যাত লোগোর রঙে এই চারটি রঙের ব্যবহার মনে করতে পারেন নীচের কমেন্টে অবশ্যই জানান। আর পড়তে থাকুন ‘বাংলা খবর’।