যদি গানবাজনা করেন একটা গিটার কিংবা উকুলেলে আপনার ঘরে আছেই। আবার , অনেকে আছেন নিজেরা গানবাজনা না করলেও বন্ধুবান্ধব এসে আড্ডা দেবার সময় গাইবে বলেই গিটার রাখেন বাড়িতে। গিটার ছাড়া পাহাড়ের উপরে আগুনের ধারের একটি সন্ধ্যেও যেন পূর্ণতা পায়না। যেখানে যখন খুশি গান ধরুন আর পিঠে করে সঙ্গে নিয়ে ঘুরুন গিটার, এখনকার পৃথিবী এতেই অভ্যস্ত। এই বাদ্যযন্ত্র যেমন নিমেষে ঘরোয়া আসর জমিয়ে আমাদের সকলকে আনন্দ দিতে পারে তেমনি মঞ্চ কাঁপিয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা রাশি রাশি দর্শক ও শ্রোতার রক্তেও জোয়ার এনে দিতে পারে। গিটার প্রসঙ্গে মজাদার গল্পেরও শেষ নেই। জিমি হেন্দ্রিক্স ছিলেন ৬০-এর দশকে বিশ্বের সর্বাধিক জনপ্রিয় গিটারিস্ট, যিনি একটি ডানহাতি গিটার উল্টো ধরে উল্টোদিক থেকে বাজাতে পারতেন। এমনকি তিনি নিজের দাঁত দিয়েও গিটার বাজিয়েছেন।
চলুন, আজ আমরা জেনে নিই গিটার নিয়ে অজানা কিছু কথা।
পিয়ানোর পরেই বিশ্বের সর্বাধিক জনপ্রিয় বাদ্যযন্ত্র গিটার। সতেরো শতকে স্প্যানিশ শব্দ ‘গিতারা’ থেকে ইংরিজিতে ‘গিটার’ কথাটি গৃহীত হয়। উনিশ শতকে ব্যান্ডগানের প্রচলনের সঙ্গে সঙ্গেই গিটারের চাহিদা বাড়তে থাকে। বিভিন্ন ধরনের সংগীত যেমন-রক, মেটাল, পাঙ্ক, পপ, ফোক, কান্ট্রি, গতানুগতিক কিংবা ব্লুস এর সঙ্গে গিটার বাজানো হয়। মূলত তিনরকমের গিটার হয়- ক্ল্যাসিকাল, অ্যাকাস্টিক এবং ইলেকট্রিক গিটার।
#১ – প্রথম গিটারটি তৈরি হয়েছিল মিশরে
আজ থেকে ৩,৫০০ বছর আগে মিশরে একধরনের তারের বাদ্যযন্ত্র বাজানো হতো যেগুলো অনেকটা আজকের গিটারের মতো দেখতে। এগুলির নাম ছিল ‘বান্দুরা’। যদিও এই বাদ্যযন্ত্রের সঙ্গে গিটারের মাঝের দূরত্ব অনেক, কিন্তু প্রাচীনতম গিটার বললে আমাদের সেগুলোর কথাই মনে পড়বে। হার-মোস নামে পরিচিত সেই সময়ের একজন শিল্পীর সঙ্গে এই বাদ্যযন্ত্রের সংযোগ রয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। তিনিই হয়ত প্রাচীন গিটারের নির্মাতা।পরিষ্কার সিডার গাছের কাঠ এবং রহাইড সাউন্ডবোর্ড ব্যবহার করে তৈরি একটি তিন তারের বাদ্যযন্ত্র তিনি বাজাতেন। যন্ত্রের সঙ্গে ঘোড়ার চুল দিয়ে বাঁধা একটি পেল্কট্রামও থাকতো।এই আকর্ষণীয় প্রাচীন গিটারটি বর্তমানে কায়রোর প্রত্নতাত্ত্বিক যাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে।
#২- গিটারের তারের প্রকারভেদ
বেশিরভাগ সাধারণ গিটারের ৬টা তার থাকে কিন্তু ৪টে এবং ১২ টা তারের গিটারও রয়েছে। এমনকি ৭, ৮ এবং ১০ তারের গিটারেরও অস্তিত্ব রয়েছে, যদিও খুবই কম পাওয়া যায়। আগে পশুদের বৃহদান্ত্র দিয়ে গিটারের তার বানানো হতো। এখন কেবলমাত্র ধাতু কিংবা নাইলনের স্ট্রিংস হয়।
#৩- ফেন্ডার কোম্পানির উৎপাদন
ফেন্ডার পৃথিবীর বৃহত্তম গিটার কোম্পানিগুলোর একটা । ফেন্ডার একদিনে ৯০,০০০ গিটারের তার তৈরি করে। একবছরে তৈরি তারের সম্মিলিত দৈর্ঘ্য হয় ২০,০০০ মাইল, যা গোটা পৃথিবীকে একবার বের দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট!
# ৪ – বিশ্বের বৃহত্তম চালু গিটারটি ১৩ মিটার দীর্ঘ
গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের মতে বিশ্বের বৃহত্তম গিটারটির দৈর্ঘ্য ১৩ মিটারেরও বেশি (প্রায় ৪৩ ফুট)।একটি বেড়াতে যাবার বাসের দৈর্ঘ্য প্রায়! লক্ষণীয়ভাবে আরও মজার বিষয় হল, গিটারটি কেবলমাত্র একটি সাজানো মডেল হিসেবেই তৈরি নয়।এটি একটি যথার্থ বাদ্যযন্ত্রই।প্রতিটি তারই উপযুক্ত পিচে বাঁধা সম্ভব।
টেক্সাসের একাডেমি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি এই বিস্ময় গিটারটির উদ্ভাবক। গিটারটির ওজন প্রায় ২২৫৫ পাউন্ড ( এক হাজার কেজির বেশি) যেটি তৈরি হতে এবং সাজাতে লেগেছিল একবছর।গিবসন কোম্পানির কুখ্যাত ফ্লাইং ভি আকৃতি অনুসরনেই এটি বানানো হয়েছিল।
# ৫ বিশ্বের ক্ষুদ্রতম গিটারটির দৈর্ঘ্য মাত্র ১০ মাইক্রন!
মানে, আপনি চাইলেই এটা বাজাতে পারবেন না। আঙ্গুলগুলো অতিরিক্ত ক্ষুদ্র হলেও নয়। কোন একটি ক্ষুদ্র সংস্করণের রোবট হয়ত বাজাতে পারবে।কারণ যন্ত্রটি মাত্র ১ / ১00,000 মিটার দীর্ঘ , যা মানবদেহের একটি কোষের মাপ। নিউইয়র্কের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্লেষকগণ এই গিটার তৈরি করেন।দুই ভাঁজযুক্ত কাটওয়ে স্টাইলের বৈদ্যুতিক গিটার এটি। এমনকি তারগুলোও নিখুঁতভাবে সজ্জিত।ভাবছেন, বাজালে শোনা যাবে কিনা? অবশ্যই যায়। কারণ, ক্ষুদ্র আকারের কারণে তারগুলির অনুরণন এতই বেশি, যে তা সম্পূর্ণরূপে মানুষের কানের বোধগম্য।
# ৬ – সর্বাধিক ব্যয়বহুল গিটার বিক্রি হয়েছে নগদ ২.৮ মিলিয়ন ডলারে
২০০৪ সালে ভারত মহাসাগরের সুনামি বিধ্বস্ত এলাকা এবং ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের জন্য তহবিল সংগ্রহ উপলক্ষে ‘রিচ আউট টু এশিয়া’ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। সেখানে ফেন্ডারের তৈরি একটি বিশেষ ‘ রিচ আউট টু এশিয়া’ উপলক্ষ্য স্ট্র্যাটোকাস্টার গিটারটি নিলাম হয়েছিল। বিলাসবহুল সেই ফেন্ডার গিটারটি কাতারের দোহায় রিটজ-কার্লটন হোটেলে বিক্রি হয়েছিল ২.৮ মিলিয়ন ডলারে।সম্ভ্রান্ত এক ভদ্রমহিলা, শিহকা মিয়িয়াসাহ আল থানি সেটি কিনেছিলেন।এই বিপুল পরিমাণ অর্থ তহবিলে যুক্ত হওয়ায় সুনামি কবলিত এলাকায় সংস্কার সাধন করা সম্ভব হয়েছিল।
সেই বিশেষ সাদা রঙের স্ট্র্যাটোকাস্টার তৈরি করতেই প্রায় ২০,০০০ ডলার ব্যয় হয়েছিল। এর বিশেষ ধরনের সজ্জার কারণেই শেষে এতখানি দাম উঠেছিল বলে মনে করা হয়; সজ্জাগুলি আর কিছুই না, বিখ্যাত সংগীত শিল্পী এবং গিটারিস্টদের সাক্ষর।স্বাক্ষরকারীরা ছিলেন- মিক জাগার, কিথ রিচার্ডস, এরিক ক্ল্যাপটন, ব্রায়ান মে, জিমি পেজ, ডেভিড গিলমোর, জেফ বেক, পিট টাউনসেন্ড, পল ম্যাককার্টনির মতো গিটার আইকন। আরও বিভিন্ন কিংবদন্তির মধ্যে ছিলেন স্টিং এবং ব্রায়ান অ্যাডামস (যিনি রিচ আউট টু এশিয়া উদ্যোগের কল্পনা করেছিলেন)।
# ৭ – গিবসন সর্বকালের সর্বাধিক বিলাসবহুল গিটার তৈরি করেছিলেন
উপরে আমরা যে ফেন্ডার স্ট্র্যাট গিটারটির কথা লিখেছিলাম সেটি স্বাক্ষর সংগ্রহের কারণে লাভজনক হয়েছিল। কিন্তু ২০১৫ সালে, গিবসন গোষ্ঠী এমন এক গিটার বানালেন যার উপকরণগুলির দাম সত্যিই আকাশ ছোঁওয়া। উপকরণ আর্কিটেক্ট অ্যারন শাম, এবং শিল্পী ও পরিকল্পনাকারী মার্ক লুই-এর নামদ্বয় একত্রিত করে গিবসনের সৃষ্টি – “ইডেন অফ করোনেট” বিশ্বের সেই সর্বকালের বিলাসবহুল গিটার। এটি একটি সাদা এসজি যা ৪০০ টিরও বেশি মূল্যবান পাথর সহ ১৮ ক্যারেটের ১.৬ কেজি সোনার সমন্বিত। অতএব, গিটারটির মূল্যও আন্দাজ করতে পারছেন!
# ৮ – একজন ব্যক্তি তাঁর স্ট্রেটোকাস্টার গিটারকে বিয়ে করেছিলেন
ব্রিটিশ গিটার বাদক ক্রিস ব্ল্যাক ২০০১ সালে তাঁর লাল রঙের ফেন্ডার স্ট্রেটোকাস্টার গিটারটির প্রেমে পড়েছিলেন।সুন্দরী সেই গিটারের নাম ছিল ‘ব্রেন্ডা দ্য ফেন্ডা’ । তিনি দীর্ঘ ৩৫ বছরের ‘ডেটিং’ এর পরে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন গিটারটির সঙ্গে। লন্ডনের একটি হলে এই অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল। একজন সহকর্মী গোটা বিষয়টা পরিচালনা করেছিলেন। গিটারটি আসলে তাঁর দ্বিতীয় ‘স্ত্রী’ ছিল, কারণ ক্রিস একইভাবে একজন মানব মহিলার সঙ্গেও তখন বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ ছিলেন। নিজের দিকে কখনই মনোযোগ দেন নি তিনি। যদিও ক্রিস বলেছিলেন, কেবলমাত্র স্বতঃস্ফূর্তভাবে মজা করার জন্যই তিনি সকলকে নিয়ে অনুষ্ঠানটি করেছিলেন।
# ৯- ইবনেজ প্রথমবার সপ্তম এবং অষ্টম স্ট্রিং যুক্ত করেছে
এখনকার বিভিন্ন ব্র্যান্ড যেমন-ইএসপি, অতিরিক্ত স্ট্রিং বা তার সহ গিটার তৈরি করে চলেছে; এর সম্পূর্ণ কৃতিত্ব আসলে জাপানের বিখ্যাত গিটার কোম্পানি ইবনেজের। তারাই প্রথম প্রিন্সিপ্যাল ব্র্যান্ড থেকে সাতটি স্ট্রিং (১৯৯০ সালে প্রস্তাবিত) এবং আটটি স্ট্রিং (২০০৭ সালে বাজারে আসা)মিলিয়ে মাস-প্রডিউস গিটারের উদ্ভব ঘটায়। আশ্চর্যের বিষয় হল, ৭টি তারের গিটার শুরুতে উচ্চমার্গের এ-তারের বদলে নিম্নগ্রামের বি-তার সম্পন্ন হবার কথা ছিল। কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে, বিশেষত মেটাল সংগীতের দুনিয়ায় জনপ্রিয়তার জন্যই এটি সঠিক পথে চলে গেছে!
ভারতের আর্থিক ল্যান্ডস্কেপের বিস্তীর্ণ বিস্তৃতিতে, একটি নাম ব্যক্তি এবং ব্যবসার সাথে সমানভাবে অনুরণিত হয় যা মজবুত আর্থিক সমাধান খুঁজছে: ফেয়ার ফাইন্যান্স। এর প্রতিষ্ঠাতা দীনেশ...
আপনি কি আর্থিক ডোমেনে আছেন এবং এমন একটি অংশীদারিত্ব চাইছেন যা বৃদ্ধির জন্য প্রচুর সুবিধা এবং সম্ভাবনা সরবরাহ করে? ফেয়ার ফিনান্স আপনাকে সরাসরি বিক্রয়...