কথায় আছে “সব তীর্থ বারবার,গঙ্গাসাগর একবার” কিন্তু এবার গঙ্গাসাগর স্নানেও করোনার মার।কলকাতা হাইকোর্ট চাইছেনা করোনা-আবহে গঙ্গাসাগর মেলায় কোনও পুণ্যার্থী জলে নেমে স্নান করুন। তা বলে কি পুণ্য অর্জনে বঞ্চিত হবে আপামর জনগণ? একেবারেই নয়। কিয়স্ক থেকে গঙ্গাসাগরের জল পাওয়ার সুবিধা করার চেষ্টা শুরু করেছে রাজ্য। করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে সেখান থেকেই সবাই জল সংগ্রহ করুক,এমনটাই মত হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিদের।
প্রধান বিচারপতি টি বি এন রাধাকৃষ্ণন বারবার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে একসঙ্গে বিপুল সংখ্যক পুণ্যার্থী জলে নেমে স্নান করলে লাফিয়ে বাড়বে কোভিড সংক্রমণ। কোনও সংক্রমিত ব্যক্তি জলে নেমে এক সেকেন্ড ডুব দিলেও সংক্রমণ ছড়াতে পারে মারাত্মক ভাবে।
তবে জলে নামা নিয়ে এখনই কোনও স্পষ্ট নির্দেশ হাইকোর্টের তরফ থেকে দেওয়া হয়নি। শুধু একথা জানানো হয়েছে, যে যাঁরা ই-স্নান (অনলাইনে দর্শন, কিয়স্ক থেকে জল নেওয়া বা বাড়িতে বসে অর্ডার করে গঙ্গাসাগরের জল নেওয়া) করবেন, উৎসাহিত করার জন্য পুরষ্কার দেওয়া যেতে। জলে নামা থেমে জনসাধারণকে বিরত রাখতে মাইকে ঘোষণা শুরু করার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট।

WhatsApp Image 2021 01 09 at 1.03.19 PM 1

যদিও কেউ রাজ্যের ঘোষণা অগ্রাহ্য করে জলে নামলে কি পদক্ষেপ নেওয়া হবে সে বিষয়েও এ দিন প্রধান বিচারপতিদের বেঞ্চ নির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি। রাজ্য সরকারের আয়োজন সম্পর্কে মুখ্যসচিবকে আগামী বুধবার, ১৩ জানুয়ারি রিপোর্ট দিতে হবে। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে মেলার আয়োজন করা যাবে কি না, সে দিনই তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে আদালত।বৃহস্পতিবারের হাইকোর্টে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের শীর্ষ কর্তার রিপোর্ট তলব করা হয়েছিল। তাতে জানানো হয়েছে যে কোভিড বিধিকে মেনে স্ক্রিনিং, আরটিপিআর টেস্ট সেন্টার থাকছে এমনকি দর্শনার্থীদের জন্য ই-দর্শনের ব্যবস্থা থাকছে। এমনকি, মানুষ ঘরে বসেই যাতে পাত্রে গঙ্গাসাগরের জল পেতে পারে তারও ব্যবস্থা করছে রাজ্য সরকার। স্বাস্থ্য-অধিকর্তার এই রিপোর্টে মোটের উপরে সন্তোষজনক ঠেকেছে বিচারপতিদের কাছে।
অজয় দে নামক এক ব্যাক্তি দুর্গাপুজো, কালীপুজো, ছট পুজোর মতো গঙ্গাসাগরে জনাসমাগম নিয়ে আদালতে জনস্বার্থ মামলা করেছিলেন। তাঁর কৌঁসুলি সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায় আদালতে জানান সে, গঙ্গাসাগরের জন্য রাজ্যে একটি পৃথক আইন আছে। সেই আইন বলে, মানুষের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে এই আশঙ্কায় সাগরদ্বীপে বাইরে থেকে লোকের প্রবেশ বন্ধ করতে পারে রাজ্য।
তবে দুর্গাপুজো, কালীপুজো,ছটপুজো বা ক্রিসমাসে স্বাস্থ্যবিধি অগ্রাহ্য করে যেভাবে সর্বত্র জনসমাগম হয়েছিল তাতে গঙ্গাসাগরে পরিস্থিতি কি আকার ধারণ করবে তা কিঞ্চিৎ আন্দাজ করা যেতে পারে। প্রতিবছর গঙ্গাসাগরে গড়ে ৩০লক্ষ মানুষের সমাগম হয়, এবছর সেই পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি হলে তার ফলাফল কি হবে তা আশঙ্কাজনক।এই কথা মাথায় রেখেই বারবার ই-স্নানের প্রতিই জোর দিচ্ছে হাইকোর্টের বিচারপতিদের বেঞ্চ।

1 COMMENT