খুশকি বা ড্যানড্রাফ(dandruff) হল শীতকালীন একটি দুশ্চিন্তার বিষয়, অসাবধান হলেই যেটি হয়ে উঠতে পারে খুবই লজ্জাজনক সামাজিকভাবে পরিস্থিতি কালীন অবস্থায়। এমত অবস্থায় নিচের বর্ণনায় বিস্তারিতভাবে জানানোর চেষ্টা করলাম যে কি কি উপায়ে খুশকি কে আটকানো যায়। কিন্তু তার আগে আপনার জানতে হবে খুশকি সম্পর্কিত এই তথ্যাদি :
খুশকি কেন হয়?
খুশকি মুখ্যত সকলেরই হয়ে থাকে, যদিও শীতকালে এর বাড়বাড়ন্ত হয় খুব বেশি। ডাক্তারি মতে সোবিয়াম নামক এক প্রকার গ্রন্থির জন্য জন্য শরীরে খুশি হয়ে থাকে। তবে খুশকি হওয়ার পেছনে অনেক সময় বেশ কতগুলি কারন থেকে থাকে যার মধ্যে অন্যতম গুলি হল – বংশানুক্রমিক রোগ, অতিরিক্ত টেনশন ( দুশ্চিন্তা), তৈলাক্ত চামড়া, অপরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা, ফাঙ্গাস জাতীয় সমস্যা প্রভৃতি।
খুশকি কত রকম হয় ?
খুশকি নানা প্রকারের হয়ে থাকে যা চিকিৎসক দের দ্বারা বিভাজন হয়, যদিও মুখ্যত চার ধরনের খুশকিকে আমরা দেখে থাকতে পারি – তৈলাক্ত খুশকি, ফাঙ্গাস খুশকি, শুষ্ক খুশকি, বংশানুক্রমিক বা জিনগত খুশকি।
খুশকির ফলে কি ক্ষতি হতে পারে?
খুশকির ফলে নানা রকম রোগ হয়, যার মধ্যে অন্যতম হলো চর্মরোগ, টাক পড়ে যাওয়া, স্নায়ুরোগ প্রভৃতি।
খুশকির হাত থেকে বাঁচতে কি করা উচিত?
মুখ্যত খুশকি যদি সামান্য মাত্রায় হয়ে থাকে সে ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত ঘরোয়া টোটকা গুলি ব্যবহার করুন অন্যথায় কোন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে পরামর্শ করাটা বাঞ্ছনীয়।
খুশকি দূর করার ঘরোয়া টোটকা
শীতের মরশুম হাজির আর সাথে হাজির খুশকির সমস্যাও। অনেকে অবশ্য বারোমাসই এই সমস্যায় ভুগে থাকেন। তবে শীতের শুস্ক আবহাওয়ায় এই খুশকির সমস্যা অনেকটাই বেড়ে যায়। চুল পড়া, চুল প্রাণহীন দেখানো এই সবের মুলে খুশকি। এই সমস্যায় কি আপনিও ভুগছেন? তাহলে ব্যাবহার করুন এই ঘরোয়া টিপসগুলি।
টিপস ১- ( নারকেল তেল ও লেবুর মিশ্রণ)
শীতকালে আমাদের মাথার স্ক্যাল্প শুষ্ক থাকে আর মাথার ত্বকের আদ্রতা ফেরাতে নারতেল তেল ও লেবু খুব উপকারি।
ব্যাবহার পদ্ধতি- নারকেল তেল আর সাথে পাতি লেবুর রস কারন লেবুর রসে রয়েছে সাইট্রিক অ্যাসিড যা খুশকি নিরাময়ে কার্যকরি।
টিপস-২ ( টক দইয়ের হেয়ার মাস্ক)
খুশকি দূর করতে ও চুল স্বাস্থ্যোজ্জ্বল করতে টকদইয়ের জুরি মেলা ভার।
ব্যাবহার পদ্ধতি- ৬ টেবিল চামচ মত ফেটানো টকদই এরপর এতে ২ চামচ হেনা পাউডার ভালোভাবে মেশান। মিশ্রণটি চুলের গোড়াসহ পুরো চুলে লাগিয়ে ভালো ভাবে লাগিয়ে নিন। ২৫-৩০ মিনিট রাখুন তারপর মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন এরপর। মাসে ২ বার এই মাস্ক টি ব্যাবহার করুন এতে খুশকি যেমন দূর হবে তেমন চুল নরম ও ঝলমলে দেখাবে।
টিপস-৩ ( মেথি- নারকেলের তেল)
মেথি যেমন রান্নার স্বাদ বাড়ায় তেমন চুলের খুশকি দূর করতে একেবারে যাদুর মত কাজ করে।
ব্যাবহার পদ্ধতি- নারকেল তেল গরম করে তার সাথে আগের দিন রাতে ভিজিয়ে রাখা মেথি বাটা মিশিয়ে স্ক্যাল্পে লাগিয়ে ম্যাসাজ করুন, ১০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন সপ্তাহে দুদিন এটি ব্যাবহার করুন। যদি আপনার কাছে অত সময় না থেকে থাকে তবে নারকেল তেলের সাথে গোটা মেথি কয়েক মিনিট ফুটিয়ে নিন তারপর ঠাণ্ডা করে ওই তেলের মিশ্রণটি কন্টেনারে স্টোর করে রাখুন এতে আপনার সময় ও বাঁচবে আর খুশকি ও দূর হবে।
টিপস- ৪ ( ডিম ও লেবুর মিশ্রণ)
ডিমের সাদা অংশ আমাদের চুলের জন্য খুব উপকারি আর তার সাথে লেবু হলে তো কোন কথাই নেই। কিভাবে ব্যাবহার করবেন? জেনে নিন
ব্যবহার পদ্ধতি- ডিমের সাদা অংশটি বার করে নিন তার পর তাতে ২ টেবিল চামচ পাতি লেবুর রস মিশিয়ে নিন এর পর ওই মিশ্রণটি স্ক্যাল্প সহ গোটা চুলে ভালো করে লাগিয়ে নিন খানিকক্ষুন রেখে ধুয়ে ফেলুন সপ্তাহে দু থেকে তিনবার এটি ব্যাবহার করুন আর ফল পান হাতে নাতে।
টিপস-৫ ( পিঁয়াজের রস)
পিঁয়াজ যে আমাদের চুলের জন্য কতটা উপকারি তা আমাদের কারোরই জানতে আর বাকি নেই। পেয়াজের শ্যাম্পু, পেঁয়াজের তেল নিত্যনতুন প্রোডাক্টের ছড়াছড়ি মার্কেটে, দাম ও বেশ চড়া। তাই ঘরোয়া পদ্ধতিতে ব্যাবহার করুন পেঁয়াজের রস।
ব্যাবহার পদ্ধতি- দুটো বড় মাপের পিয়াজ মিহি করে বেটে নিন তারপর একটি পাতলা পরিষ্কার সুতির কাপড়ে ওই মিশনটি থেকে রস টা ছেঁকে বার করে নিন। এরপর সেটি সরাসরি বা তেলের সঙ্গে মিশিয়ে স্ক্যাল্পে ম্যাসাজ করুন তারপর শ্যাম্পু করে ফেলুন। ব্যাস খুশকি কে টাটা বাইবাই করুন। এই রস নিয়মিত ব্যাবহার করলে খুশকি তো দূর হব্রি পাশাপাশি চুলের গোড়া মজবুত হবে ও চুলের গ্রোথ বাড়বে।
কি তাহলে জেনে নিলেন তো কত সহজ উপায়ে ঘরোয়া পদ্ধতিতেই খুশকির সমস্যা দূর করা সম্ভব। আর দেরি কিসের আর থেকেই ব্যাবহার করতে শুরু করুন এই টিপসগুলি। আর কতটা উপকৃত হলেন সেটা কিন্তু আমাদের কমেন্ট করে জানাতে একদম ভুলবেন না।