রেড়ির তেল বা ক্যাস্টর অয়েল কি কি দরকারে লাগে তা আমরা অনেকেই জানি না, কিন্তু একসময় ভারতবর্ষের ঘরে ঘরে এই তেল নানান প্রয়োজনে ব্যবহার হত। তাছাড়া হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে এই সর্বগুণসম্পন্ন তেল সারা পৃথিবীতে ব্যবহার হয়ে চলেছে। Ricinus Communis নামক গাছের বীজ থেকে এই তেল নিঃসৃত । এর বীজকে আমরা চিনি ক্যাস্টর বিনস (Castor Beans) নামে। তবে এই বীজগুলোতে রয়েছে এক ricin নামের বিষাক্ত এনজাইম। ক্যাস্টরের বীজ গরম করা হলে এই বিষাক্ত এনজাইম নষ্ট হয়ে যায়। তাই ক্যাস্টর অয়েল মূলত ব্যবহার হয় প্রসাধনী আর ওষুধ তৈরির কাজে। বলা হয় যে ইজিপ্টে ক্যাস্টর অয়েল একসময় ব্যবহার হত প্রদীপ জ্বালাতে। তাছাড়াও সেখানকার মানুষ চোখে চুলকানি উপশমে এবং প্রসব যন্ত্রণা লাঘব করতে এই তেল ব্যবহার করে এসেছে অনেকদিন।
ক্যাস্টর অয়েলে আছে রিসিনোলেইক ও মোনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড। ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে এই উপাদান। পরিবেশের জন্য ত্বকের আর্দ্রতা হারালে ক্যাস্টর অয়েল ত্বকের হারিয়ে যাওয়া আর্দ্রভাব ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। এই কারণেই বিভিন্ন কসমেটিকস, ক্রিম, লোশন ইত্যাদিতে ক্যাস্টর অয়েল মেশানো থাকে। তাছাড়া ক্যাস্টর অয়েল নারকেল তেল, আমন্ড তেল এবং অলিভ ওয়েলের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করলে ত্বক পরিষ্কার উজ্জ্বল এবং পরিষ্কার হয়।
চুলের যত্নে ক্যাস্টর অয়েল
https://www.healthline.com/health/beauty-skin-care/castor-oil-hair-growth
চুলের যত্নে ক্যাস্টর অয়েলের জুড়ি মেলা ভার। চুলের আসল রং ববজায় রাখতে ক্যাস্টর অয়েল ভীষণ জরুরি। এছাড়াও যদি মাথায় পাকা চুল দেখা যায়, তাহলে ক্যাস্টর অয়েল লাগালে পিগমেন্টেশন নষ্ট হওয়া প্রতিরোধ সম্ভব। আর চুলকে তার গোড়া থেকে কণ্ডিশন করার জন্য ক্যাস্টর অয়েলও সাহায্য করে। চুল পড়া বন্ধ করে এই তেল। ক্যাস্টর অয়েল থেকে রুক্ষ এবং নিষ্প্রাণ চুলের চিকিৎসাও করা হয় সারা পৃথিবীতে।
স্ট্রেচ মার্কের সমস্যায় ইদানিং পৃথিবীর অধিকাংশ স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ জর্জরিত। কিন্তু অনেকেই খোঁজ রাখি না যে স্ট্রেচ মার্কের দাগ শরীর থেকে নিশ্চিহ্ন করতে ম্যাজিকের মতন কাজ করে ক্যাস্টর অয়েল। বলিরেখা প্রতিরোধে এবং ত্বকের অকাল বার্ধক্য রোধ করতেও ক্যাস্টর অয়েল নানাভাবে ব্যবহার হয়।
চর্বি বা ওজন কমাতেও ব্যবহার করা হয় ক্যাস্টর অয়েল ।দু থেকে তিন চামচ উপযুক্ত ক্যাস্টর অয়েল খেলে ওজন বৃদ্ধি কমানো যায় কারণ তাতে খিদে কম পায়। এছাড়াও মেটাবলিজম ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে, এটা বহু ডাক্তার স্বীকার করেছেন। তা ছাড়াও লিভার ডিটক্সিফিকেশনে, রক্ত প্রবাহ বাড়াতে, লিম্ফ্যাটিক সঞ্চালনে, এই সমস্ত প্রয়োজনে ক্যাস্টর অয়েল প্রয়োজনীয় বলে প্রমাণিত হয়েছে।
চোখের তলার কালো ভাব, ত্বকের নানান রোগ, চুলকুনি, পিগমেন্টেশন এমনকি ব্রণও আটকাতে সাহায্য করে ক্যাস্টর অয়েল। নিয়মিত ভাবে উপযুক্ত পরিমাণে লাগালে এই তেল শরীরকে করে তোলে সজীব ও প্রাণবন্ত। ঠোঁট ফাটা কমাতে এবং ঠোঁটের কালো দাগ দূর করতেও এই তেলের কোনও তুলনা হয় না।
তবে কোনও কিছুই প্রয়োজনের অতিরিক্ত বা ভুল অনুপাতে গ্রহণ করা উচিত নয়। ক্যাস্টর অয়েলের মতন এমন উপকারী তেলের ক্ষেত্রেও এই কথা খাটে বৈকি! নির্দিষ্ট অনুপাতে, কতটুকু দরকার, আর সঙ্গে কি কি মেশানো উচিত তা বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে জেনে নেওয়াই ভালো। আপনারা কি বলেন?!