নিজস্ব সংবাদদাতা: দেশজুড়ে করোনার পরিস্থিতির জেরে গত সোমবার উত্তরপ্রদেশের ৫টি শহরে লকডাউন ঘোষণার কথা জানিয়েছে এলাহাবাদ হাইকোর্ট। কিন্তু তাতে একেবারেই রাজি নয় যোগী আদিত্যনাথ সরকার। এরপরেই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় তারা এবং তাতে সফলও হয়। যার পরে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, শুধুমাত্র সপ্তাহান্তে কার্ফু হবে। পাশাপাশি যোগী আদিত্যনাথ সরকার জানিয়ে দিয়েছে, এখনই উত্তরপ্রদেশে লকডাউনের কোনও পরিকল্পনা নেই।
শুধু যোগীরাজ্যই নয় মধ্যপ্রদেশ ও হরিয়ানার মত বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিও লকডাউন এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। উত্তরপ্রদেশে যেমন সপ্তাহান্তে কার্ফু ঘোষণা করা হয়েছে, মধ্যপ্রদেশে তেমনই ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত বেশকিছু বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে। এক্ষেত্রে করোনা কার্ফু নাম দেওয়া হয়েছে শিবরাজ সিং চৌহানের সরকারের তরফে। মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান জানিয়েছেন, লকডাউনের প্রয়োজন নেই। একইসঙ্গে হরিয়ানা সরকারও জানিয়ে দিয়েছে, আপাতত লকডাউনের প্রয়োজন নেই, কড়াকড়ি ও সতর্কতার মাধ্যমেই করোনার সঙ্গে লড়াই করা যাবে।
কিন্তু কেন লকডাউন চাইছে না বিজেপি? এই প্রশ্নের প্রেক্ষিতে উঠে আসছে বেশ কিছু বিষয়। দীর্ঘ লকডাউনের জেরে গতবছর বিরোধীদের প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে হয়েছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। একইসঙ্গে লকডাউনের জেরে চাকরি খোয়াতে হয়েছিল বহু মানুষকে। বিপদে পড়েছিলেন বহু পরিযায়ী শ্রমিক। বড়সড় ধাক্কা খেয়েছিল ভারতীয় অর্থনীতি। হয়ত সেই কারণেই মোদী বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিকে লকডাউন না করার পরামর্শ দিচ্ছেন। একইভাবে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি নিজেরাও লকডাউন না করার জন্য বিভিন্ন যুক্তি দিচ্ছে, আর এর নেপথ্যে তাদের রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে।
বিশিষ্ঠ সাংবাদিক সিদ্ধার্থ কলহংস জানাচ্ছেন, যোগী সরকার প্রথমেই জানিয়ে দিয়েছিল এবার লকডাউন করা হবে না। সেক্ষেত্রে যদি হাইকোর্টের নির্দেশে লকডাউন করতে হত তাহলে জনমানসের মধ্যে সরকার যে ব্যর্থ, সেই বার্তাই যেত। আর এই কারণেই লকডাউন করতে চাইছে না যোগী সরকার। এছাড়া যেভাবে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে মোদী লকডাউন না করার আবেদন জানিয়েছেন তাতে বোঝা যাচ্ছে যে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি আগে থেকেই এটা জানত, তাই তারা লকডাউনের পথে হাঁটছে না।
সিদ্ধার্থ কলহংস আরও জানাচ্ছেন যে, যদি লকডাউন করা হয় তবে দেশের অর্থব্যবস্থায় তার সরাসরি প্রভাব পড়বে। গতবারের লকডাউনের জেরে অর্থব্যবস্থা প্রায় স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল, যা এখনও অনেক রাজ্য সামাল দিয়ে উঠতে পারেনি। ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন ব্যবসায়ীরা। একইসঙ্গে ভারতের অর্থনীতিকে ৫ ট্রিলিয়নে পৌঁছানের যে স্বপ্ন মোদী দেখেছেন তাতেও ঘোর অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এছাড়া রয়েছে অন্যান্য সমস্যাও। লকডাউন হলে সরকারকে রেশন দিতে হবে, শ্রমিকদের স্থানীয় ভাবে কাজ দিতে হবে। আর এই সমস্ত কারণেই হয়ত নরেন্দ্র মোদী এবার লকডাউনের বিপক্ষে বলে মনে কর হচ্ছে।