২০২০ সালে পাওয়া ভালো যাকিছু শৈল্পিক উপাদান তার মধ্যে অবশ্যই থাকবে কুইন্স গ্যাম্বিট। গত অক্টোবরে কুইন্স গ্যাম্বিট নেটফ্লিক্সে এসেছিল। দেখামাত্রই সকল দর্শকের হৃদয় জয় করে নিয়েছে এই অসাধারণ ওয়েব সিরিজটি। গল্পের বুনন এবং অভিনয় নৈপুণ্যই এমন আদর্শ উপস্থাপনকে হাসি কান্নায় বাস্তব করে তোলে। সিরিজের কয়েক ঘণ্টা জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ে। দেখা শেষ হয়ে গেলেও দোলা দিতে থাকে হৃদয়ে। চোখের কোনে জল অথচ ঠোঁটে বিজয়ীর হাসি, নিজেকে আবিষ্কার করতে পারেন অন্য এক মোড়ে।
জেগে ওঠে অন্তর্নিহিত এক লড়াকু সত্তার তেজ, যা জীবনের যেকোনো কঠিন মুহূর্তে মনের মধ্যে থেকে নিষ্ঠা ও সাহস যোগায়। অনেক পুরনো সময় থেকে হাঁটতে শিখিয়ে আবার নতুনে ফিরিয়ে নিয়ে আসে। কুইন্স গ্যাম্বিট শিখিয়েছে সেই সবকিছুই। সিরিজটি নিয়ে দর্শকের উল্লাস ২০২০ সালে নেটফ্লিক্সে সম্প্রচারিত অন্যান্য সব ওয়েব সিরিজকে ছাপিয়ে গিয়েছে । এই বিপুল সাফল্যের দিকে তাকিয়ে আজ কুইন্স গ্যাম্বিট নিয়ে জানা যাক কিছু তথ্য।
কুইন্স গ্যাম্বিট নিয়ে রইল ৩৫টি তথ্য—
1. কুইনস গ্যাম্বিট একটি আমেরিকান ড্রামা টেলিভিশন সিরিজ।
2. ১৯৮৩ সালে ওয়াল্টার টেভিসের লেখা উপন্যাস ‘কুইন্স গ্যাম্বিট’ অবলম্বনে ২০২০ সালে পাওয়া ভালো যাকিছু শৈল্পিক উপাদান তার মধ্যে অবশ্যই থাকবে একই নামের সিরিজটি বানানো হয়েছে।
3. নেটফ্লিক্সে এর প্রকাশ ২৩শে অক্টোবর, ২০২০ সাল।
4. কুইন্স গ্যাম্বিট একটি কাল্পনিক গল্প যেখানে প্রতিভাবান অনাথ বালিকা বেথ হারমনের জীবনের কিছুটা সময় প্রতিফলিত হতে দেখা যায়। আট বছর বয়েসে অনাথ আশ্রমের স্কুলে ভর্তি হওয়া থেকে শুরু করে কীভাবে বেথ পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ দাবা খেলোয়াড় হয়ে সাড়া ফেলে দিলেন তাই নিয়েই এই জমজমাট গল্প।রয়েছে অজস্র বিপর্যয়।যে পরিবার বেথকে তের বছর বয়সে দত্তক নিয়েছিল সেই পরিবারের জটিলতা বেথের কৈশোর ও যৌবনের সূচনাকে প্রভাবিত করে। ড্রাগ এবং মাদকাসক্তির কবলে পড়ে ধ্বংস হয়ে যেতে থাকে শ্রেষ্ঠ দাবাড়ুর জীবন।কিন্তু আবেগ ও অনুভুতির টানাপড়েনের মধ্যে দিয়ে অনবরত এগিয়ে যাবার অনুপ্রেরণাই লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে সহায়ক হয় জেদি মেয়েটিকে। এর নামই জীবন, হোক সে যতই অলৌকিক যা টেলিভিশন সিরিজে সার্থকভাবে রূপায়িত হয়েছে।
5. কাহিনী কথনের সময়কাল ১৯৫০ এর দশকের মাঝামাঝি থেকে শুরু হয় এবং ১৯৬০ এর দশকে চলে আসে।
6. ২০১৯ সালের মার্চ মাসে নেটফ্লিক্স একটি প্রযোজনা সংস্থাকে ছয় পর্বের সমন্বয়ে একটি সিরিজ বানানোর অর্ডার দিয়েছিল।
7. সেই সিরিজটিই কুইন্স গ্যাম্বিট।পরিচালনা করেছেন স্কট ফ্র্যাঙ্ক, যিনি অ্যালান স্কটের সাথে এই সিরিজটির শৈল্পিক নির্মাতা।
8. পরিচালকদ্বয় উইলিয়াম হরবার্গের পাশাপাশি নির্বাহী নির্মাতা হিসাবেও কাজ করেছিলেন।
9. কার্লোস রাফেল রিভেরা সিরিজের সাউন্ডস্কোরটি রচনা করেছিলেন।
10. প্রাক্তন বিশ্ব দাবা চ্যাম্পিয়ন গ্যারি কাসপারভ এবং দাবা কোচ ব্রুস প্যান্ডলফিনি পরামর্শদাতার ভূমিকায় এই সিরিজটিতে বিশেষভাবে সাহায্য করেছেন।
11. সিরিজের অর্ডার ঘোষণার পাশাপাশি ঘোষণা করা হয়েছিল যে আন্যা টেলর জয় প্রধান চরিত্রে বেথের ভূমিকায় অভিনয় করবেন।
12. ইতিপূর্বে যেসব ছবিতে অভিনয় করে তিনি জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন সেগুলি হল- দ্য উইচ (২০১৫), স্পিল্ট (২০১৭) এবং ইমা (২০১৯)।
13. মিনিসিরিজ প্রিমিয়ারের তারিখ ঘোষণার পরে, জানানো হয়েছিল যে বিল ক্যাম্প, টমাস ব্রোডি-সঞ্জস্টার, হ্যারি মেলিং এবং মারিয়েল হেলার গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রগুলিতে অভিনয় করবেন।
14. কেমব্রিজের অন্টারিওতে মূল ফটোগ্রাফির কাজ শুরু হয়ে গেছিল ২০১৯ সালের অগস্ট থেকেই।
15. শুটিং হয়েছিল বার্লিনেও।বার্লিনের কিনো ইন্টারন্যাশনাল, বার্লিন চিড়িয়াখানা এবং ফ্রেড্রিখস্টাড্ট-পালস্টে শুটিং চলেছে বেশকিছু দিন।
16. বিনোদন সাপ্তাহিকের ড্যারেন ফ্রেঞ্চিচ সিরিজটিকে বিশেষভাবে প্রশংসা করেছেন। তিনি প্রধান অভিনেত্রীকে বর্ণনা করেছিলেন, “টেলর-জয় শান্ত মুহুর্তগুলিতে দুর্দান্ত হয়ে উঠেছিল, যখন তার প্রতিপক্ষকে চূড়ান্তভাবে দাঁড় করায় তার চোখের পলক সংকীর্ণ হয়, যখন খেলাটি তার বিপরীতে পরিণত হয় তখন তার পুরো শরীর ক্রুদ্ধ হতাশাকে শারীরিক করে তোলে।”
17. রোলিং স্টোনের জন্য এই সিরিজটির পর্যালোচনা করে অ্যালান সেপিনওয়াল এটিকে 5 টির মধ্যে 3 টি স্টার দিয়েছেন।
18. ভ্যারাইটিসের ক্যারোলিন ফ্রেমকে লিখেছেন “কুইনস গ্যাম্বিট খেলা এবং তার খেলোয়াড়দের গল্প বলে।চাতুর্যের সঙ্গে এধরণের কাহিনী উপস্থাপনার জন্য নির্মাতাদের ধন্যবাদ জানাই। অ্যানা টেলর জয় একজন শীর্ষস্থানীয় অভিনেতা হিসেবে এত আকর্ষণীয় যে যখন তিনি ক্যামেরার লেন্সে তাকিয়েছেন তখন মনে হয়েছে সেই শানিত উজ্জ্বল চাহনি যেন ছুরির ফলার মতো ভেদ করে চলে যায়’’।
19. মিনিসিরিজ পর্যালোচনা করে রোটেন টমেটোস 100% রেটিং পেয়েছে বেশিরভাগ দর্শকের থেকে। সব মিলিয়ে ১০ এর মধ্যে ৮ হল কুইন্স গ্যাম্বিটের প্রাপ্ত গড় রেটিং।
20. ওয়েবসাইটটির সমালোচকদের মন্তব্যে লেখা আছে, ” খেলার চালগুলো সর্বদা নিখুঁত নয়, তবে অ্যান্যা টেলর-জয়ের চৌম্বকীয় পারফরম্যান্স, অবিশ্বাস্যভাবে উপলব্ধ হওয়া সময়ের বিবরণ এবং সংবেদনশীল বুদ্ধিমান লেখনির মধ্যে, কুইন্স গাম্বিট একটি চূড়ান্ত জয়।”
21. সাধারণভাবে, কুইন্স গ্যাম্বিট হল দাবা খেলার প্রাচীনতম একটি ওপেনিং।
22. এটি যে পদক্ষেপ দিয়ে শুরু হয় সেটি এরকমঃ 1.d4d5 2.c4
23. ১৪৯০ সালে গ্যাটিনজেন পাণ্ডুলিপিতে এই ওপেনিঙের উল্লেখ করা হয়েছিল। পরবর্তীকালে ১৭ শতকে গিয়াচিনো গ্রিকোর মতো দাবা মাস্টাররা কুইন্স গ্যাম্বিট চালের বিশ্লেষণ করেছিলেন।
24. অষ্টাদশ শতাব্দীতে, এটি ফিলিপ স্টামমা দ্বারা প্রস্তাবিত হয়েছিল এবং কখনও কখনও তার সম্মানে আলেপ্পো গ্যাম্বিট নামেও পরিচিত ছিল।
25. আধুনিক দাবা শুরুর দিকের সময়ে রানি বা বোরে দিয়ে খেলার সুচনার চল ছিল না। রানির গাম্বিট সাধারনের মধ্যে চালু হয়েছিল ১৮৭৩-এ ভিয়েনা টুর্নামেন্টের পর।
26. সুতরাং, শিরোনাম নিজেই প্লটটি সম্পর্কে অনেক কিছু জানায়, আপনি এমনকি যদি উপন্যাসটি নাও পড়ে থাকেন বুঝতে পারবেন এর প্রসঙ্গ।
27. দাবার বোর্ড দেখা গেছে এমন বেশিরভাগ সিনেমা এবং টেলিভিশন শোতে দাবা খেলার যথার্থতা রক্ষার দিকে ততটা খেয়াল রাখা হয়নি এর আগে। কুইন্স গ্যাম্বিটে দাবার খুঁটিনাটির ক্ষেত্রে যত্ন নিয়ে সততা বজায় রাখা হয়েছে। দাবা বোর্ডগুলি সর্বদা এই সিরিজে সঠিকভাবে সাজানো ছিল।দাবা খেলা ও ঘুটির অবস্থান সবই ছিল বাস্তবসম্মত।
28. মিঃ শাইবেল এলিজাবেথকে এই ছবিতে ‘মডার্ন চেস ওপেনিং’ শীর্ষক একটি বই দিয়েছিলেন যেটির সাধারণ নাম এমসিও।ঐতিহাসিক এই বইটি রিচার্ড ক্লেভিন গ্রিফিথ এবং জন হারবার্ট হোয়াইট দ্বারা রচিত। প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৯১১ সালে।
29. বইটি তখন থেকে ১৫টি সংস্করণ হয়েছিল। দাবাখেলার ওপেনিং নিয়ে বিংশ শতাব্দীর প্রথম বিজ্ঞানভিত্তিক গ্রন্থ হিসাবে বইটিকে বিশেষিত করা হয়েছে।
30. একটি সাক্ষাৎকারে অ্যান্যা টেলর-জয় (বেথ হারমন) বলেছিলেন যে এই ছবিতে অভিনয় করার আগে তাঁর দাবাখেলার বিষয়ে কোন ধারণা ছিলনা।
31. তিনি আরও বলেছেন যে, সিরিজটির চিত্রগ্রহণের সময় তাঁকে যেন এক গোপন বিশ্বে আহ্বান করা হয়েছিল। সেখানে বলা হয়েছিল ৩ টি বোর্ডের উপর খেলার এই জটিল ক্রমটি শিখতে হবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব।পারলে পাঁচ মিনিটের মধ্যেই। এরকম চাপের মুখে পড়ে উত্তেজনায় তিনি আনন্দিত হয়েছিলেন।
32. টমাস বডি-স্যাংস্টার (বেনি ওয়াটস) এবং হ্যারি মেলিং (হ্যারি বেল্টিক)ও স্বীকার করেছেন যে চিত্রগ্রহণের আগে তারা খেলা সম্পর্কে খুব কমই জানতেন।
33. পুরো সিরিজ জুড়ে হারমনের দাবা খেলা শেখার বিভিন্ন পর্যায় দেখা যায়। আট বছর বয়েস থেকে শুরু করে বাইশ অবধি এই খেলায় শেখার এবং নিজেকে ধরে রাখার প্রচেষ্টার শেষ নেই বলেই মনে হয়। সেইসঙ্গে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের দাবাড়ুদের সঙ্গে মোকাবিলা; নিষ্ঠা, আত্মবিশ্বাসের পরীক্ষা এবং নানাবিধ ক্ষুরধার চাল প্রয়োগ টানটান উত্তেজনা ধরে রাখে।
34. শিশু বেথের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন অন্যতম প্রতিভাবান শিশু শিল্পী ইস্লা জন্সটন।
35. কুইন্স গ্যাম্বিট রয়েছে সবথেকে চাহিদাসম্পন্ন ওয়েব সিরিজের তালিকায়। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে এক নম্বরে এবং ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ফ্রান্স, নিউজিল্যান্ড এবং ভারতের শীর্ষ তালিকায়।
যদি কুইন্স গ্যাম্বিট এখনও না দেখে থাকেন তবে এই তথ্যগুলো পড়ার পর অবশ্যই দেখতে ইচ্ছে করবে। নেটফ্লিক্স ফোনে নিতে এখন মাসিক খরচ মাত্র ১৯৯ টাকা। দেরি না করে নেটফ্লিক্স নিন আর নতুন বছরের বিনোদন সামগ্রী অফুরন্ত উপভোগ করুন। সব খবর সবার আগে জানতে পড়তে থাকুন বাংলা খবর। বাংলা খবরের পক্ষ থেকে আপনাকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা।
[…] […]
[…] […]