রাজ্যপাল ধনকর রাজভবনের নাকি রাজ্যের? কি বলছেন তিনি?
ভারতবর্ষের স্বাধীনতার পর রাষ্ট্রপতির দ্বারা প্রতিটি রাজ্যে একজন করে সর্বোচ্চ কর্তা “রাজ্যপালে”র নিয়োগ করে থাকেন। পাঁচ বছরের মেয়াদে রাজ্যপাল রাজ্যের দায়ভার বহন করেন। পশ্চিমবঙ্গের প্রথম (১৯৪৭ সালের) রাজ্যপাল ছিলেন চক্রবর্তী রাজা গোপালাচারি। এখনও পর্যন্ত শেষ (২০১৯ সালের) রাজ্যপাল হলেন জগদীপ ধনকর (http://rajbhavankolkata.nic.in/)। কে এই জগদীপ ধনকর?
জগদীপ ধনকর জন্মসূত্রে রাজস্থানের কিঠানা গ্রামের বাসিন্দা। ১৯৮৯ থেকে ১৯৯১ সাল তিনি রাজস্থানের বিধানসভার সদসস্য ছিলেন। জনতা দলের প্রার্থী হিসেবে তিনি ১৯৯৩ থেকে ৯৮ এম. এল. এ হিসেবে কাজও করেন।
পরবর্তীকালে তিনি রাজস্থান হাইকোর্টে বার কাউন্সিলের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি হিসেবেও বেশ কিছুকাল কাজ করেন। রাষ্ট্রপতি রাম নাথ কোভিন্দ দ্বারা ২০১৯ সালে পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ – নিরপেক্ষ পদে ধনকর শপথ নেন।(https://twitter.com/jdhankhar1)
রাজ্যপাল হলেন শাসন ক্ষমতা, আইন প্রণয়নের ক্ষমতার অধিকারী। রাজ্য ছাড়াও রাজ্যপাল বেশ কিছু জায়গার সর্বোচ্চ স্থানের অধিকারী। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হল, ভারতীয় জাদুঘর, রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অফ কালচার, স্বশাসিত বিশ্ব বিদ্যালয়, ইন্ডিয়ান রেড ক্রস সোসাইটি ইত্যাদি।
১৯৪৭ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত মোট ২৮ জন রাজ্যপাল পদস্থ হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গে। রাজ্যের উত্থান পতনে রাজ্যপালের ভূমিকা আজকের মতো এত চর্চার আগে হয়নি। জগদীপ ধনকরের নাম খবরের শিরোনামের দিক দিয়ে বিচার করলে বেশ আলোড়নকারি।
রাজ্যপাল গুরুত্বপূর্ণ পদমর্যাদার অধিকারী হলেও রাষ্ট্রপতি শাসন ছাড়া অন্য সময়ে তার তেমন বিশেষ কিছু করণীয় থাকে না। প্রচার মাধ্যমের আলোকে সবসময় আসারও তেমন সুযোগ হয় না। জগদীপ ধনকর এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম।
২০১৯ সালে রাজ্যপাল পদে শপথ গ্রহণের পরপরই জগদীপ ধনকর রাজ্য সরকারের প্রতি বিরূপ মন্তব্য করেন যা তার ভূমিকা নিয়ে বিতর্কের জন্ম দেয়। তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত সরকারের বিরুদ্ধে করা অবিরাম ও সরাসরি কটাক্ষ ধনকরকে আরও বিতর্কিত করে তোলে।
রাজ্য সরকারের সাথে বিতর্ক শুধু নয় কেন্দ্রীয় সরকারের স্বজনপোষণ করার স্পষ্ট ইঙ্গিতও তাঁর কর্ম কাণ্ডে প্রকাশ পেয়ে থাকে। ভারতীয় জনতা পার্টির পশ্চিমবঙ্গে ঘাঁটি মজবুত করার জন্য রাজ্যপালের ভূমিকাও প্রশ্নের মুখে। বারবার রাজ্য সরকারের সঙ্গে সংঘাতে তার বক্তব্য অযৌক্তিক মনে হয়েছে একাধিক মহলে।
২০১৯ সালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়ের সাথে ছাত্রদের ঘটা বিবাদেও রাজ্যপালের উপস্থিতি ও মন্তব্য উত্তাল করে তোলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব স্তরকে। যার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে ছাত্র ও শিক্ষক মিলিতভাবে বয়কটে নামেন। এই প্রথম কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্যকে ছাড়াই সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। এই ঘটনার জন্য তাঁর অপমান বোধের সীমা পার করে যায় ট্রোলের স্তর।
রাজ্য সরকার ও রাজ্যের মানুষ সবার বেঁচে থাকা, জীবনযাপন, সামাজিক জীবনের বিষয়েও রাজ্যপাল জগদীপ ধনকরের কটাক্ষ বাড়তে থাকে উত্তরোত্তর। কেন্দ্রের কাছে রাজ্য সরকারের ভূমিকা, দুর্নীতি দমনে অক্ষমতা, পুলিশরাজ নিয়ে তিনি নালিশ জানান শেষ পর্যন্ত। উচ্চবিত্ত থেকে অতি সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ, সমাজের সব স্তরের মানুষের কাছেই ‘রাজ্যপাল’ শব্দটাই খোরাক হয়ে উঠেছে।
রাজ্যপালকে তীক্ষ্ণ মন্তব্যে বিদ্ধ করতে রাজ্যের শাসকদলও ছাড়েনি। তৃনমূল কংগ্রেস রাজ্যপালকে বি. জে. পি. দলের “লাউডস্পিকার” বলে বিদ্রূপ করা হয়। তার সাথে সাথে একথাও যোগ করা হয় যে তিনি “রাজভবনের কলঙ্ক”। যে পদে নিরপেক্ষতা বজায় রাখাই প্রথম ও প্রধান রাখার কর্তব্য সেই পদের অবমাননা করছেন বলেই দাবী শাসকগোষ্ঠীর।
সম্প্রতি বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে. পি. নাড্ডা এ রাজ্যে দলীয় কর্মসূচীতে যোগ দিতে এলে যে অবাঞ্চছিত ঘটনা ঘটে তার পরিপ্রেক্ষিতে বিজেপির দলীয় প্রতিক্রিয়া এবং রাজ্যপালের রোষ উভয়ই একই সুরে ধ্বনিত হচ্ছে। রাজভবন সূত্রে জানা গেছে এই বিষয়ে তিনি কেন্দ্রকে তাও রিপোর্টও ইতিমধ্যেই পাঠিয়ে দিয়েছেন। সাংবাদিক বৈঠকে তিনি রাজ্য সরকারকে “আগুন নিয়ে না খেলার” সাবধানী হুংকারও দেন।
"Accountability will be enforced," J.Dhankar said, and asked Banerjee "not to play with fire". "The law and order situation in the state has been worsening with each passing day. Despite cautioning the chief minister and the administration nothing has happened," he said.
সারা রাজ্য রাজ্যপালের বাক্যবাণে মুখরিত। প্রতিদিনি প্রায় তিনি সাংবাদিক বৈঠকে বিচ্ছুরণ ঘটাচ্ছেন তার মতামত তথা আক্রোশের। এই আক্রোশ কতটা যুক্তিযুক্ত আর কতটা রাজনৈতিক প্রভাবান্বিত তা বিবেচনার দায় ব্যাক্তির নিজস্ব। আগামী আরও চার বছরে তিনি আরও কি কি বলেন, তার উত্তরে সরকারই বা কি বলে আর তার মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত সরকারে কে থাকে সেটাই দেখার। এরকম আরও খবর জানতে হলে পরতে থাকুন বাংলা খবর।