পৌষ পার্বণে ঘরে ঘরে পিঠে হওয়াটা একটা স্বাভাবিক ব্যাপার। বাঙালির কাছে পৌষ মাস মানেই পিঠে খাওয়ার অজুহাত। পিঠে খেতে যে রকম সুস্বাদু ঠিক সেরকমই পিঠে বানানোর জন্য কোন কম কিছু উপকরণ লাগে না। তবে এই করোনা আবহে বারবার বাইরে বেরিয়ে পিঠে সামগ্রী কিনে আনাটাও একটা বিশাল বড় চাপের সমান। এই সমস্যাটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় বৃদ্ধ মানুষদের ক্ষেত্রে। কিন্তু তাই বলে কি বাঙালি পিঠে খাবেনা এ আবার হতে পারে? তবে চলুন আজ আপনাদের বাড়িতে উপস্থিত কিছুমাত্র উপকরণ দিয়েই ৫টি পিঠে বানানোর পদ্ধতি বলে রাখি। যাতে আপনাদের পিঠে খাওয়ার ইচ্ছে মিটবে এবং বারবার নিজেকে সঙ্কটে ফেলা থেকেও মুক্ত রাখবেন। তবে আর দেরি না চলুন দেখে নিই।
১. পাটিসাপটা
পিঠের কথা বললেই প্রথমেই যা মনে আসে তার হল পাটিসাপটা। পাটিসাপটা পিঠের মধ্যে অন্যতম বলাই চলে। তবে পাটিসাপটা বানাতে কম কিছু উপকরণ লাগেনা। সবথেকে মেন যে উপকরণটি দরকার তা হলো নারকেল। বাড়িতে নারকেল নেই, তাহলে কি পাটিসাপটা হবে না? এইরকম চিন্তার কোন কারণ নেই। ফ্রিজে বেশ কয়েকদিন পুরনো সন্দেশ পড়ে রয়েছে? তাই দিয়ে হবে পাটিসাপটা। তবে চলুন পাটিসাপটার ঘরোয়া উপকরণ একবার দেখে নিন।
- পুরনো সন্দেশ ও দুধ সহযোগে তৈরি হবে পুর।
- ব্যাটার তৈরির জন্য লাগবে দুধ, সুজি, ময়দা ও চিনি।
প্রথমে পুরনো সন্দেশ গুলোকে ভাল করে ভেঙে নিন, তারপর একটি ফ্রাইং প্যানে দুধ গরম করতে দিন। দুইটা হালকা গরম হয়ে আসলে গুঁড়ো করা সন্দেশ গুলো তার মধ্যে দিয়ে দিন। এরপর যতক্ষণ না দুধ টা পুরোপুরি সন্দেশের সঙ্গে টানছে ততক্ষণ ভাল করে নাড়তে থাকুন। দুধ টা ভালো করে টেনে গেলে আপনার পুরো একদম রেডি। পরের প্রসেসটা হল ব্যাটার তৈরির জন্য একটি পাত্রে সুজি, ময়দা, চিনি একসাথে নিয়ে জল মিশিয়ে পাটিসাপটার ব্যাটারটি তৈরি করুন। দেখবেন ব্যাটারে মিষ্টি যেন বেশি না হয়ে যায়। ব্যাস আপনার পাটিসাপটার দুটি প্রধান উপকরণ তৈরি। এবার ফ্রাইং প্যানে তেল দিন আর ঝটপট পাটিসাপটা বানাতে থাকুন। প্রথম প্রথম একটু ভেঙ্গে যেতে পারে তবে প্রথম কয়েকটি ভাঙার পর ঠিকঠাক তৈরি হবে। চেষ্টা করবেন ব্যাটারটা যেন বেশি পাতলা না হয়। ব্যাস আপনার ঘরোয়া পাটিসাপটা তৈরি এবার গরম গরম পরিবেশন করুন।
২. দুধপুলি
দুধপুলি প্রত্যেকের অত্যন্ত প্রিয় পিঠে। পৌষ মাসে এমন কোনো বাড়ি নেই যেখানে দুধপুলি হয়না। দুধপুলি বানানো এমন কঠিন কোনো কাজ নয়। কিন্তু দুধপুলি বানাতে গেলে কিছু উপকরণ দরকার পরে, যেটি সবসময় বাড়িতে পাওয়া দুষ্কর, যেমন- চালের গুঁড়ো।অথচ বাড়িতে আতপ চাল রয়েছে। ব্যাস এই আতপ চাল দিয়েই তৈরি হবে আপনার দুধপুলি। প্রথমে আতপ চাল গুলো ভালো করে ধুয়ে নিন। তার পর ভালো করে জল ঝরিয়ে নিন। জল ঝরে গেলে মিক্সিতে ভালো করে গুঁড়ো করে নিন। ব্যাস আপনার চালের গুঁড়ো তৈরি। এবার এই চালের গুঁড়ো দিয়ে ঝটপট বানিয়ে ফেলুন দুধপুলি।
৩. মালপোয়া
পৌষ পার্বনে মালপোয়া যদি নাই খাওয়া হয় তবে পিঠে খাওয়া অসম্পূর্ণ থেকে যায়। মালপোয়া পিঠের মধ্যে আরেকটি অন্যতম। শীতকালে গরম গরম মালপোয়া খাওয়ার মজাই আলাদা। কিন্তু অনেকসময় মালপোয়া বানানোর সামগ্রি বাড়িতে থাকেনা। সেই মুহূর্তে চটজলদি মালপোয়া বানানোর একটি রেসিপি আপনাদের সাথে ভাগ করে নিলাম। মালপোয়ার ব্যাটার বানানোর জন্য আপনার দরকার দুধ, চিনি, সুজি ও ময়দা। সব কিছু ভাল করে মিশিয়ে নিন। ব্যাস তৈরি আপনার মালপোয়ার ব্যাটার। এবার আর দেরি না করে গরম গরম ভাজুন আর পরিবেশন করুন।
৪. চিতই পিঠে
চিতই পিঠে বাড়িতে বানানো বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার। উপকরনও বেশ লাগে কিন্তু আমার রেসিপি দিয়ে আপনি খুব অল্প উপকরন দিয়েই বানাতে পারেন চিতল পিঠে। প্রথমে আতপ চাল ভালো করে গুঁড়ো করে নিন তারপর ভালো করে একটা ব্যাটার বানিয়ে নিন। এবার আপনি ভাপেঁ বসানোর জন্য একটি সঠিক পাত্র খুঁজুন। যেমন- ইডলি স্ট্যান্ড বা একটি সসপেন তার উপরে সঠিক ভাবে গরম হাওয়া প্রবেশ করতে পারে একটি থালা। যদি ইডলি স্ট্যান্ড আপনার কাছে থেকে থাকে তাহলে ভালো নাহলে যে ভাবে বলেছি ঠিক ওইভাবে সেট করতে পারেন তাহলে আপনার পিঠে ঠথাঠাক হবে। এবার ব্যাটার টাকে সেদ্ধ করতে দিয়ে দিন। ১০ মিনিট অন্তর অন্তর দেখতে থাকবেন। নাহলে পিঠে টা পুড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। যখন পিঠে গুলো সিদ্ধ হয়ে আসবে তখন ওগুলো নামিয়ে নিন। আর গরম গরম নলেন গুড় সহযোগে পরিবেশন করুন।
৫. মিষ্টি আলুর পিঠে
পিঠে খাওয়ার শখ হয়েছে কিন্তু বাড়িতে সেইরকম উপকরন নেই। ঝুড়ি ভর্তি মিষ্টি আলু পড়ে রয়েছে? মিষ্টি আলু সহযোগে আপনি খুব সহজেই চমৎকার একটি পিঠে বানাতে পারেন। যেখানে আপনার শুধুমাত্র দরকার ময়দা সুজি সেদ্ধ করা মিষ্টি আলু ও বাড়িতে পরে থাকা খোয়া ক্ষীর। খোয়া ক্ষীরে দুধ দিয়ে বানিয়ে ফেলুন পুর। এবার একটি পাত্রে ময়দা, সুজি ও মিষ্টি আলু চটকে একটি ডো তৈরি করে ফেলুন। এবার একটু একটু ডো থেকে লেচি কেটে নিয়ে তার মধ্যে পুর ভরে পিঠের আকারে ভেজে নিন। গ্যাসের উপর একটি পাত্র বসান। সেই পাত্রে পরিমাণ মতো জল দিন ও চিনি দিয়ে ভালো করে জ্বাল দিন। যখন জলের পরিমাণ কমে আসবে তখন গ্যাসটি বন্ধ করে দেবেন। এই ভাবে আপনার পিঠের রস তৈরি হয়ে গেল। এবার গরম গরম ভাজুন আর রসে ফেলুন। ব্যাস তৈরি আপনার মিষ্টি আলুর পিঠে।
আমি আমার জানা পাঁচটি পিঠের রেসিপি আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম। আপনাদের যদি ভালো লেগে থাকে আমাকে জানাতে ভুলবেন না কোন রেসিপিটি আপনাদের সবচাইতে বেশী ভাল লাগল এবং কোন রেসিপি বাড়িতে বানিয়ে দেখেছেন। এছাড়াও আপনি বা আপনার পরিবারের সদস্যরা কোন পিঠে খেতে পছন্দ করেন তাও জানাতে পারেন আমাকে কমেন্ট করে।