নিজস্ব সংবাদদাতা: এবার সিপিএম প্রার্থীদের তালিকায় তারুণ্যের জোয়ার। ‘পক্ককেশী নেতানেত্রী দল’ তকমাটা সরিয়ে রীতিমত গা ঝাড়া দিয়ে উঠেছে লাল পার্টি। তবে এই তরুণ-তরুণীদের ভিড়ে এখনও এমন কয়েকজন বরিষ্ঠ নেতা রয়েছেন, যাঁরা কর্মে এবং দৌড়ঝাঁপে নতুনদের টাফ ফাইট দিতে পারেন। তাঁদের মধ্যেই একজন কান্তি গাঙ্গুলি। বয়স ৭৮, তবুও অবলীলায় দৌড়ে বেরোচ্ছেন তিনি। একটুও কি হাঁপিয়ে যাচ্ছেন না? ফুৎকারে সেই প্রশ্ন উড়িয়ে দিয়ে বলে দিচ্ছেন ক্লান্তি নেই তাঁর। কান্তি গাঙ্গুলি ক্লান্তিহীন এখনও। সুন্দরবনের মানুষজন বলেন, “ঝড়ের আগে কান্তি আসে”।

আসলে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার মানুষ জানেন বাঁধ নির্মাণ থেকে রাস্তার হাল ফেরানো, আমফানের তান্ডব হোক বা বুলবুলের দাপট- সবেতেই এখনও ভরসা রাজ্যের প্রাক্তন সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী। তবে এবার তিনি ভোটে দাঁড়াতে চাননি। দলকে বারবার অনুরোধ করে চিঠিও লিখেছিলেন, তবু দল নাম ঘোষণা করায় দলের সিদ্ধান্ত মাথা পেতে নিয়েছেন। বলেছেন, “জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত বামপন্থাই আমার আদর্শ। এই বয়সেও দল আমায় আগুনে ঝাঁপ দিতে বললে আমি দিয়ে দেব”। গলায় ঝোলানো গামছায় ঘাম মুছতে মুছতে অকপট স্বীকারোক্তি তাঁর। 

সুন্দরবনের মানুষের জন্য কাজ করার এতটাই সদিচ্ছা যে, ভোটে হারা জেতা নিয়ে মাথাই ঘামান না তিনি। বলছেন, সুন্দরবনে জন্মেছেন তাই এই মাটির প্রতি আলাদা আবেগ, জন্মস্থানের প্রতি ঋণ শোধ করছেন তিনি। প্রসঙ্গত, প্রথমবার ২০১১ সালে মমতা ঝড়ে তিনি হেরে যান দেবশ্রী রায়ের কাছে। দ্বিতীয়বার ২০১৬ তেও ফের হারেন দেবশ্রীর কাছেই। গত পাঁচ বছরে এলাকায় তাঁর দেখা মেলেনি বলে লোকে বলছে দেবশ্রী দাঁড়ালে তাঁর জামানত জব্দ হত। তাঁর পরিবর্তে যিনি দাঁড়িয়েছেন তাঁকে নিয়ে মানুষের উৎসাহ খুব একটা চোখে পড়েনি।

অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেসের যে নেতা মোটের উপর জনপ্রিয় ছিলেন, সেই শান্তনু বাপুলি টিকিট না পেয়ে ক্ষোভে এবার বিজেপিতে যোগ দিয়েই প্রার্থী হয়েছেন। ফলে তাঁর কি সেই গ্রহণযোগ্যতা হবে? নিরুত্তাপ কান্তি গাঙ্গুলি অবশ্য বলছেন, এসব রাজনৈতিক হিসেব নিকেষ করে লাভ নেই। ধর্মের হাওয়ায় যদি ভোট হয় তার মধ্যে যদি এসে ঢোকে গরিব গুর্বকে কেনার জন্য বিপুল টাকা তবে অনেক হিসেব উল্টোপাল্টা হয়ে যায়। পক্ককেশী কান্তি গাঙ্গুলির কথায়, “রায়দিঘির টানেই দাঁড়িয়েছি। তাই ফলাফল নিয়ে ভাবি না। যা হবে দেখা যাবে।” তবে রায়দিঘি লালে লাল। আর এলাকা জুড়ে অজস্র দেওয়াল লিখন, ‘‌আমরা এবার কান্তি দা কেই চাই’‌।