নিজস্ব সংবাদদাতা: পরশু রাতে মধ্য কলকাতার স্ট্র্যান্ড রোডে রেলের নিউ কয়লাঘাট ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর একদিন কেটে গিয়েছে। তবে এই বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ড ১ দিন পরেও দিনভর চর্চায় থাকল। পাশাপাশি চলতে থাকল সূক্ষ্ম রাজনীতি, দোষারোপ এবং পাল্টা দোষারোপের পালা। গতকাল সেখানে গিয়েছিলেন বিজেপি নেতারা। তাঁদের দেখেই অনেককে বলতে শোনা গেল, আজ কেন, কাল রাতে কোথায় ছিলেন? পথচলতি মানুষ থেকে রেলকর্মী, সবার মধ্যেই নেতাদের উপস্থিতি নিয়ে কানাঘুষো শোনা গিয়েছে। এমনকি বিজেপি নেতাদের ঘিরে স্থানীয়দের ক্ষোভও ছিল বেশ নজরে পড়ার মতোই।
আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর মঙ্গলবার ভোর থেকেই রেলের এই অফিসের অগ্নিদগ্ধ তলা পরিষ্কারের কাজে হাত লাগান দমকল কর্মীরা। সেই সঙ্গে চলেছে কুলিংয়ের কাজও। আপাতত পুরো বিল্ডিংটিই ব্যারিকেড দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। দুটি গেটেই মোতায়েন রয়েছে পর্যাপ্ত সংখ্যক রেল পুলিশ। বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই ধরনের ঘটনা স্বাভাবিকভাবেই উস্কে দিয়েছে রাজ্য রাজনীতিকে। ওই রাতে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘটনাস্থলে এসেছিলেন। কথা বলেছেন কর্তব্যরত দমকল, পুলিশ কর্মীদের সঙ্গে। ভরসা জুগিয়েছেন তাঁদের। এমনকি অগ্নিকাণ্ডে মৃতদের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ, সঙ্গে চাকরি দেওয়ার ঘোষণাও করেছেন তিনি।
তখনই অভিযোগ উঠেছিল, যেখানে খোদ রেলের বিল্ডিংয়েই আগুন লেগেছে, সেখানে রেলের আধিকারিকরা কোথায় গেলেন? দিনভর সেই প্রশ্ন মানুষের মুখে মুখে ঘুরেছে। বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই ঘটনা স্বাভাবিকভাবেই উস্কে দিয়েছে রাজনীতিকে। গতকাল বেলার দিকে ঘটনাস্থলে এসেছিলেন বিজেপি’র রাজ্যসভার সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত এবং দলের এক দাপুটে নেতা। তাঁর সামনেই ক্ষুব্ধ রেল কর্মীদের প্রশ্ন, মুখ্যমন্ত্রী যদি ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে পারেন, তাহলে কেন্দ্রের ক্ষতিপূরণ মাত্র দু’লক্ষ টাকা কেন?
স্বাভাবিকভাবেই অস্বস্তিতে পড়েন ওই বিজেপি নেতারা। এদিকে, গতকাল সিপিআইএম বিধায়ক সুজন চক্রবর্তীও এসেছিলেন। মমতা’র মতই তাঁরও প্রশ্ন, রেলের একটি ভবনের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় এত গাফিলতি কেন? বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা ও সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় দমকলের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এদিকে, স্বপন দাশগুপ্ত বা রাহুল সিনহারা যখন রাজ্য সরকারকে দুষছেন, তখন রাস্তার ধারে জটলায় চর্চা, মুখ্যমন্ত্রী তো কাল অত রাত অবধি ছিলেন। তখন এই বিজেপির নেতৃত্বরা কোথায় ছিলেন? এখন এসেছেন টিভিতে মুখ দেখানোর জন্য।
এই প্রশ্নকর্তাদের কয়েকজন খোদ রেলের কর্মী। তাঁরা কাজ করেন কাছেই ফেয়ারলি প্লেসে। সেখান থেকেই এসেছিলেন ঘটনাস্থল দেখতে। একই বক্তব্য পথচলতি মানুষের মুখেও। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকায় সাধুবাদ জানিয়েছেন প্রত্যেকে। হাওড়ার বাসিন্দা অম্লান লাহিড়ী বলেন, “এটাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে এঁদের তফাত। একজন মুখ্যমন্ত্রী মধ্যরাত পর্যন্ত ঘটনাস্থল সামলালেন। এখন নিউ কয়লাঘাট বিপন্মুক্ত হওয়ার পর এই বিজেপি নেতারা এসেছেন মুখ দেখাতে।”