কমলা হ্যারিস আজ পৃথিবীর বিশেষ শক্তিশালী দেশের এক নম্বর মহিলা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে রয়েছেন। আর এই মুহূর্তে যে খবরটা গোটা পৃথিবীতে কদিন ধরে ট্রেন্ডিং, তা হল ডোনাল্ড ট্রাম্পের পর আমেরিকার ছেচল্লিশতম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন জো বিডেন। সারা পৃথিবীর মানুষ তাঁর কথা জানতে চায় আজ, শুনতে চায় তাঁর জীবনকাহিনী। কিন্তু তাঁর পাশাপাশি আরেকজন মানুষ বিশেষ করে এই ঘটনার ফলে লাইমলাইটে উঠে এসেছেন, তিনি হলেন কমলা হ্যারিস। আমেরিকার ভাবী ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে মনোনীত কমলা হ্যারিস ভারতীয় বংশোদ্ভূত এক মহিলা, যাঁর মা কিন্তু ছিলেন আদ্যোপান্তই ভারতীয় এক নারী। এই কমলা হ্যারিসের উত্থান নিয়ে কম বেশি আজ সমস্ত দেশের মানুষ জানতে চাইছে, খুঁজে নিতে চাইছে তাঁর জীবনের খুঁটিনাটি খবর। ফলে আজকের সময়ে দাঁড়িয়ে এই কমলা হ্যারিস যে আসলে কে, তা জানা ভীষন জরুরি!

কমলা হ্যারিস
BBC.com

পেশায় আইনবিদ কমলা গোপালন হ্যারিস। ছোটবেলা কেটেছে মা আর বোনের সঙ্গেই, আমেরিকার মাটিতে। তাঁর পড়াশোনা আর বেড়ে ওঠা সমস্ত এদেশে। ২০০৩এ সানফ্রানসিসকোর অ্যাটর্নি জেনারেল নিযুক্ত হবার পর ক্রমশ সক্রিয় রাজনীতিতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ মুখ হিসেবে পরিচিতি পান। অবশ্য প্রত্যক্ষভাবে রাজনীতিতে তিনি এসেছেন আরও পরে, ২০১৬ তে। প্রথম অ-শ্বেতাঙ্গ সেনেটর হিসেবে ক্যালিফোর্নিয়া থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন কমলা। একসময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট হবার দৌড়ে সামিলও হয়েছিলেন এই দক্ষ রাজনীতিবিদ। তবে জো বিডেনের সহকারী হয়ে আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট হয়ে হোয়াইট হাউসে ঢুকে যাওয়াও কোনও অংশে কম সম্মানের নয়, তা আজকের আমরা সবাই কম বেশি বুঝতেই পারি।

SJM L KAMPARENTS 0207 2
the mercury news

ছাপ্পান্ন বছর বয়সী এই কমলা হ্যারিস কিন্তু সংসারটাও করছেন চুটিয়ে। ডাগ এমহফের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয় ২০১৪ সালে। অন্য যে কোন পুরুষের তুলনায় ডাগ এমহফ কমলার কাজের প্রতি 100% নিষ্ঠাবান। তিনি ইলেকশন ক্যাম্পেনের এর প্রতি পদে কমলা কে সাপোর্ট করেছেন। এমনকি নিজের কাজ থেকে কিছু দিনের জন্য ছুটি নিয়ে কমলার ক্যাম্পেনের এর কাজে এদিক ওদিক ছুটে বেড়িয়েছেন। এই দম্পতির কোনও সন্তান না থাকলেও এমহফের আগের পক্ষের দুই ছেলেমেয়ের সঙ্গে কমলার সম্পর্ক খুবই ভালো। এছাড়াও নিজের বোন মায়া ও বোনের মেয়ে মীনাও কিন্তু কমলার মতনই আইনজীবী। কমলার স্মৃতিচারনের পরতে পরতে জড়িয়ে আছে ভারতবর্ষ। অনেকবার তিনি এসেছেন এই দেশে। রসনায় লেগে আছে ভারতীয় নানান খাবার। কমলার কথায় বারবার উঠে এসেছে তাঁর দাদু অর্থাৎ মায়ের বাবা স্বাধীনতা সংগ্রামী পি ভি গোপালনের কথা।

জাতিবিদ্বেষ আর বর্ণভেদ যে কোনও দেশের উন্নতির পথে প্রধান বাধা হয়ে উঠতে পারে তা তিনি ছোটবেলাতেই শিখে নিয়েছিলেন দাদুর কাছেই। এঁরা কেউই বেঁচে নেই আজ। মারা গিয়েছেন মা শ্যামলা গোপালনও। বেঁচে থাকলে কন্যার কৃতিত্বে কতটা গর্বিত হতেন তাঁর পরিবার, জানার আর উপায় নেই আজ।

113915213 f4dc7a82 af31 4eb0 9afc 0739dc8b139e
BBC

আফ্রিকা, আমেরিকা এবং এশিয়া এই তিন মহাদেশের উত্তরাধিকার রক্তে বয়ে নিয়ে এসেছেন কমলা হ্যারিস। গোঁড়া তামিল ব্রাহ্মন পরিবারের মেধাবী মেয়ে শ্যামলা গোপালন যখন ছয়ের দশকে পড়াশোনা করতে আমেরিকায় পাড়ি দেন তখন কি তিনি তাঁরই সন্তানের এমন ভবিষ্যৎ কল্পনা করতে পেরেছিলেন? সম্ভবত না। কিন্তু তাঁর মধ্যেও যে ছিল প্রথা ভাঙ্গার ক্ষমতা তা টের পাওয়া যায় যখন তিনি জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নেন সহপাঠী ডোনাল্ড জে হ্যারিসকে।

জামাইকার ছেলে এই হ্যারিসের মধ্যেও ছোটবেলা থেকেই কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি ভেদাভেদের নানান স্মৃতি জড়িয়ে ছিল। নানান পর্যায়ে এই নিয়ে সরব হয়েছিলেন তিনি। এঁদেরই মেয়ে কমলা। এঁদের নিজেদের বিয়ে একসময় ভেঙ্গে গেলেও উত্তরাধিকার সুত্রে কমলা যে উপলব্ধি লাভ করেছেন তা যে বৃথা অপচয় হয়নি তা বোঝা যায় একুশ শতকে যখন সারা বিশ্বে বর্ণভেদ নিয়ে মানুষ পথে নামছেন, তার অন্যতম পুরোধা হয়ে দাঁড়ান এই মেয়েটিই। আর শুধু বর্ণভেদ নয়, নারীর উত্থানের যে মশাল কমলা জ্বালিয়ে দিলেন বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী দেশের সর্বোচ্চ আসনে, তা ভবিষ্যতে অনেকে মানুষকে সাহস জোগাবে। আপনারা কি বলেন?!

4 COMMENTS

  1. […] এইবার এই পর্ব থেকে রামায়নের শেষ অব্দি সূর্পনখা গোটা মহাকাব্যেই প্রায় অদৃশ্য। তাঁকে সেভাবে আর দেখা যায়নি কোথাও। সীতার দুর্দশায় তিনি খুশি হয়েছিলেন কিনা, রাবণের মৃত্যুতে হাহাকার করেছিলেন কিনা, রূপ বদলে অন্য মায়ারূপ ধরতে অভ্যস্ত এই রাক্ষসী নাক-কান কাটা চেহারা বদলে অন্য সুন্দর কোনও চেহারায় নিজেকে বদলে নিয়েছিলেন কিনা, তা নিয়ে রামায়ণের রচয়িতা আশ্চর্যরকম চুপ । কিছু সূত্র থেকে জানা যায় যুদ্ধের শেষে সৎভাই বিভীষণের সঙ্গে লঙ্কাতেই থেকেছেন শেষ জীবনটা। সমুদ্রের গভীরে প্রাণ বিসর্জন দিয়ে দেন একদিন। https://banglakhabor.in/2020/11/10/%e0%a6%95%e0%a6%ae%e0%a6%b2%e0%a6%be-%e0%a6%b9%e0%a7%8d%e0%a6%af%… […]