বাংলা চলচ্চিত্র জগতের একজন খ্যাতানামা জনপ্রিয় অভিনেত্রী হলেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। উনিশ দশকের শেষের দিকে তিনি অভিনয় জীবন শুরু করেন এর পর একে একে হিট সিনেমা করে তিনি দর্শকের মনে জায়গা করে নিয়েছেন। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের সাথে তার জুটি সর্বকালের সেরা। আজ ও তাঁদের মত হিট জুটি বাংলা সিনেমায় দর্শক খুব কমই পেয়েছে। এছাড়া চিরঞ্জিত চক্রবর্তী ও অভিষেক চট্টোপাধ্যায়ের সাথে একাধিক বাণিজ্যিক বাংলা ছবিতে জুটি বেঁধে তিনি নিজেকে একজন সফল অভিনেত্রী হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন।
১৯৮৯ সাল থেকে বাংলা চলচ্চিত্র শিল্পের সঙ্গে জড়িত ঋতুপর্ণা অভিনয় করেছেন একাধিক বাংলাদেশী ও হিন্দি চলচ্চিত্রেও। বাণিজ্যিক ও শৈল্পিক উভয় ধারার সিনেমাতে তার সুদক্ষ অভিনয় তাকে এনে দিয়েছে একাধিক পুরস্কার। অভিনয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজ ও লেখালিখির সঙ্গেও জড়িত অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত।
প্রাথমিক জীবনঃ-
ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর জন্ম এই প্রাণের শহর কলকাতাতেই। মাউন্ট কারমেল স্কুলে তার পড়াশোনা শেষ করে তিনি লেডি ব্রাবোর্ন কলেজ থেকে ইতিহাসে স্নাতক হয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাবিভাগে স্নাতকোত্তর শ্রেণীতে ভর্তি হন। তবে অভিনয় পেশায় মনোযোগ দেবার কারণে মাঝপথেই পড়াশোনায় ইতি টানতে হয় তাঁকে। এরপর “চিত্রাংশু” নামে একটি শিল্পবিদ্যালয় থেকে অঙ্কন, নৃত্য ও হাতের কাজে দক্ষতা ও অর্জন করেন তিনি।
কর্মজীবনঃ-
বাংলা ধারাবাহিক শ্বেত কপোত (১৯৮৯) দিয়ে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর অভিনয় জীবনে পা রাখেন। এই ছবিতে কুশল চক্রবর্তীর বিপরীতে তিনি অভিনয় করেন। তার অভিনীত প্রথম বাংলাদেশী ছবি স্বামী কেন আসামী (১৯৯৭)।
১৯৯০ সালে শিশির মজুমদারের শেষ চিঠি ছবিতে অভিনয় করাকালীন তার কাছে প্রভাত রায়ের শ্বেতপাথরের থালা (১৯৯২) ছবিতে অভিনয় করার প্রস্তাব আসে ।তিনি তখন আধুনিক ইতিহাসে স্পেশালাইজেশনসহ এমএ প্রথম বর্ষের ছাত্রী। এই ছবির বিপুল সাফল্যের পরই তার ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায়। ১৯৯৪ সালে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের বিপরীতে “নাগপঞ্চমী” ও চিরঞ্জিত চক্রবর্তীর বিপরীতে “লাল পান বিবি” ছবিতে অভিনয় করেন ঋতুপর্ণা।কুশল চক্রবর্তীর বিপরীতে শেষ চিঠি ছবিটিও সেই বছরেই মুক্তি পায়। সুজন সখী, মনের মানুষ ও সংসার সংগ্রাম প্রভৃতি তার প্রথম দিকের এই ছবিগুলি বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করে। এরপর মুম্বাইতে তিনি হেমা মালিনীর সঙ্গে মোহিনী নামে একটি টেলিফিল্ম করেন। এছাড়াও তিসরা কৌন (১৯৯৪) নামে অপর এক হিন্দি ছবিতেও তাঁকে নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করতে দেখা যায়।
ঋতুপর্ণ ঘোষের দহন (১৯৯৭), উৎসব (২০০০), অপর্ণা সেনের পারমিতার একদিন (২০০০) ও বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের মন্দ মেয়ের উপাখ্যান (২০০২) ছবিতে তার অভিনয় দর্শক কে আজ ও মুগ্ধ করে। দহন ছবিতে ধর্ষণের শিকার এক নববিবাহিতা রোমিতা চরিত্রে অভিনয় করে তিনি ১৯৯৮ সালে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসাবে জাতীয় পুরস্কার ও অর্জন করেন।
বাংলাদেশের ছবিতে অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর অভিনয় অধিক প্রশংসা লাভ করে। তবে সাগরিকা নামক একটি চলচ্চিত্রের জন্য তাঁকে ব্যপক সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয়। তিনি ওড়িশি ও মণিপুরী নৃত্যে অত্যন্ত পারদর্শী। তার নিজস্ব “আজ ও কাল” নামে একটি নাচের দলও আছে। এই দল রবীন্দ্রনাথের চিত্রাঙ্গদা, চণ্ডালিকা, শ্যামা, মায়ার খেলা প্রভৃতি নৃত্যনাট্য ও অন্যান্য আধুনিক ভাবনার নৃত্যানুষ্ঠান মঞ্চস্থ করে খ্যাতিলাভ করেছে। এছাড়া তিনি স্থাপন করেছেন “প্রিজম এন্টারটেইনমেন্ট” নামে একটি প্রযোজনা সংস্থাও।
আনন্দলোক ও বাংলাদেশের হৃদয় পত্রিকায় তিনি নিয়মিত কলামও লিখেছেন।
ব্যক্তিগত জীবন
১৯৯৯ সালে তার বাল্যকালের প্রেমিক সঞ্জয় চক্রবর্তীকে তিনি বিবাহ করেন। তার স্বামী মবিঅ্যাপস নামে কলকাতার একটি সিইও-এর প্রতিষ্ঠাতা। থ্যালাসেমিয়া রোগাক্রান্ত শিশুদের জন্য ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত সর্বদা নিঃস্বার্থ ভাবে সাহায্য করেন। আউটডোর খেলাধূলার সঙ্গেও তিনি সক্রিয়ভাবে যুক্ত। এছাড়া অবসর সময়ে তিনি ব্যাডমিন্টন খেলেন।
পুরস্কার ও সম্মাননাঃ-
তিনি তার দীর্ঘ অভিনয় জীবনে একাধিক পুরস্কার পেয়েছেন।
তার পুরস্কারের তালিকা
- ভারত নির্মাণ পুরস্কার (১৯৯৫)
- কলাকার পুরস্কার (১৯৯৬)
- কাজী নজরুল ইসলাম জন্মশতবার্ষিকী পুরস্কার (১৯৯৬) – ল সোসাইটি অব ক্যালকাটা প্রদত্ত
- শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে রৌপ্য কমল (১৯৯৮, সালে দহন ছবিতে সহ-অভিনেত্রী ইন্দ্রানী হালদারের সঙ্গে) – ৪২তম ভারতীয় জাতীয় চলচ্চত্র উৎসব
- উজালা আনন্দলোক শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী (২০০০) – দহন ছবির জন্য
- উজালা আনন্দলোক শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী (২০০০) – আত্মীয়স্বজন ছবির জন্য
- বিএফজেএ শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী (২০০০) পুরস্কার
- বিএফজেএ শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী (২০০৬) পুরস্কার – দ্বিতীয় বসন্ত ছবির জন্য
[…] অভিনেতা হিসেবে বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে তিরিশ দশকের বিখ্যাত অভিনেতা […]