আসুন করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ থেকে নেওয়া শিক্ষার দ্বারাই তৃতীয় ঢেউয়ের মোকাবিলা করি

** করোনা ভাইরাসের বিধ্বংসী দ্বিতীয় ঢেউ সদ্য সমাপ্ত হলেও বিপদ কিন্তু পুরোপুরিভাবে কাটেনি। ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন(IMA) কিন্তু ইতিমধ্যে বলেই দিয়েছে,মানুষ যে ভাবে গাফিলতি শুরু করেছে তৃতীয় ঢেউ অবশ্যম্ভাবী।দ্বিতীয় ঢেউ সামান্য কমতেই করোনার সেই ভয়াবহ রূপ,সেই চারিদিকে লাশের স্তূপ,গঙ্গায় লাশ সব মানুষ অল্প অল্প করে ভুলতে শুরু করেছে আর এর মাঝেই রূপ বদলে নতুন ভ্যারিয়ান্ট বেরোচ্ছে করোনা ভাইরাসের।আরও ভয়ানক,আরও মারাত্বক,আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে ভাইরাসটি।সেই কারণেই পূর্বে যে ভুলগুলির কারণে দ্বিতীয় ঢেউ এসেছিল সেই ভুলগুলি পুনরায় না করার চেষ্টাই করা উচিত। তেমনই কিছু গাইডলাইন নিয়ে আজকের প্রতিবেদনটি:- *কোভিড-১৯ এর বর্তমান ভ্যারিয়ান্টগুলি খুবই বিধ্বংসী* দ্বিতীয় ঢেউয়ে কোভিডে মৃত্যুহার হঠাৎ করেই বাড়তে শুরু করেছিল।যার কারণ হিসাবে ডাক্তাররা জানিয়েছিলেন যে, ভাইরাসটি রূপ বদলাচ্ছে এবং নতুন রূপ আরও ক্ষতিকর।এই ভাইরাসটির ধর্ম হল-এটি আসলে মিউটেশনের মাধ্যমে আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে,আরও সংক্রমণাত্মক এবং আরও বেশি মানুষের দেহে ছড়িয়ে পড়তে সক্ষম হয়।নতুন ভ্যারিয়ান্টগুলিতে আক্রান্ত হলে প্রাণসংশয় আরও বেশি।সেইজন্যই আমাদের কোভিড় নির্ধারিত বিধি-নিষেধ অবশ্যই পালন করা উচিত।

বিধিনিষেধ পালন করা উচিত* কোভিড কেসের সংখ্যা কমেছে মানেই যে ভাইরাসমুক্ত সমাজ গড়ে উঠেছে তা কিন্তু নয়।পূর্বের অবস্থাগুলো থেকে এটুকু নিশ্চিত যে, লকডাউন,বিধিনিষেধ এবং কোয়ারেন্টিন ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া রুখতে যথেষ্ট সাহায্য করেছে।দ্বিতীয় ঢেউয়ের পূর্বে SARS-COV-2কে হালকা ভাবে নিয়ে এই একই ভুল করেছিলাম আমরা।তার সঙ্গে আবার গোদের উপর বিষফোঁড়া হয়ে উঠেছিল,ভাইরাসের মিউটেশন।ফলে মৃত্যুমিছিল থামানোই মুশকিল হয়ে উঠেছিল।সেকারণেই,যতদিন এই ভাইরাসের উপস্থিতি রয়েছে ততদিন আমাদের সতর্ক থাকতে হবে এবং কোভিড বিধি মেনে চলতে হবে।

*সামাজিক দুরত্ববিধি পালন এবং ডাবল মাস্ক পরা অবশ্য কর্তব্য* করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে আমাদের দায়িত্বজ্ঞানহীনতার অনেক মূল্য চোকাতে হয়েছে আমাদের।একমাত্র তার পরেই আমরা সামাজিক দূরত্ব এবং ডবল মাস্কিং-এর গুরুত্ব বুঝেছি।জনবহুল এলাকাগুলিই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ফলে হয়ে ওঠে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ।সেক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ববিধি ভাইরাস আটকানোর একটি উল্লেখযোগ্য ঢাল।পাশাপাশি খেয়াল রাখতে হবে যেন আমরা সবসময় সঙ্গে মাস্ক রাখি এবং ব্যবহার করি।পারলে ডবল মাস্ক পরলে নিশ্চিন্ত হওয়া যায়।

ভাইরাস

বাইরে গেলে কিছু সময় অন্তর অন্তর হাত ধোয়াও জরুরি। *ভ্যাকসিনেটেড হওয়া প্রধান দায়িত্ব* ভ্যাকসিন নিয়ে বহু গুজব থাকলেও বাস্তবেএটিই একমাত্র অস্ত্র যা ভাইরাসের সঙ্গে লড়তে সক্ষম হবে।অনিশ্চয়তাই ছিল দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রধান ব্যর্থতা।কারণ,বেশিরভাগ রোগীই ছিলেন উৎসর্গবিহীন।পরে হঠাৎ করেই তাঁদের স্বাস্থ্য অত্যন্ত গুরুতর হয়ে ওঠে।এ ক্ষেত্রে মিউটেশনের ফলে ভাইরাসটি কিছুদিনের জন্য মানবশরীরে নিজের অস্তিত্ব লুকোতেও কার্যত সক্ষম হয়েছিল। ভ্যাকসিন নিলে শরীরের মধ্যেই রোগমুক্তির স্বাভাবিক অনাক্রম্যতা গড়ে উঠবে এবং পরবর্তীতে আক্রান্ত হলেও তার অবস্থা খুব গুরুতর হবেনা।যদিও,এটি ভাইরাস বাহকের সংস্পর্শে এলেও ভাইরাসের দ্বারা সংক্রামিত হওয়ার নিশ্চিতি দেয়না।

*কেবলমাত্র জরুরি অবস্থাতেই ভ্রমণ* এই পরিস্থিতিতে বিভিন্ন জায়গার ট্রাফিকের ছবি এবং ভিডিও দেখেই আন্দাজ করা যায় যে,তৃতীয় ঢেউ শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা।এটা বুঝতেই হবে যে, লকডাউন এবং বিধিনিষেধ হালকা করার মানে এই নয় যে,যখন যেখানে খুশি প্রমোদ ভ্রমণের উদ্দেশ্যে রওনা দেব।নিজের পরিবার ও দেশকে বাঁচানোর জন্য দায়িত্বশীল হতে হবে এবং অপরের জীবন ঝুঁকিমুক্ত রাখতে সহায়তা করতে হবে।সেইজন্যই,শুধুমাত্র অত্যন্ত জরুরি কাজ ছাড়া ভ্রমণ না করায় শ্রেয়। *অবস্থা খুব খারাপ হওয়ার আগেই সাবধানী হওয়া* সর্বোপরি,সময় থাকতে সতর্ক হতে হবে এবং বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে।দ্বিতীয় ঢেউ আসার আগে আমরা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আন্দাজ করতে পারিনি এবং এখন যাঁরা চলে গেছেন তাঁদের ফিরিয়ে আনাও সম্ভব নয়।কিন্তু আমাদের ভবিষ্যত আমাদের হাতেই রয়েছে।করোনার আরেকটা ঢেউ আসার আগেই সাবধানী হয়ে থাকতে হবে যাতে সেটা অন্তত দ্বিতীয় ঢেউয়ের মত বিধ্বংসী রূপ না নিতে পারে।