প্রায় দুশ বছর আগে এক বাঙালি কবি আমাদের মাছ খাওয়া সম্পর্কে এই খাঁটি সত্যি কথাটা বলে গিয়েছেন। আর শুধু মাছ নয়, মাংস বা ডিম কিংবা যেকোনো আমিষ খাবারের প্রতি মানুষের যে টান, তা ঠিক যেন কথায় বলে বোঝানো যায় না। সমীক্ষায় জানা গিয়েছে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি মানুষ ননভেজ মানে আমিষ খাবারই বেশি পছন্দ করেন। চিকেন-মটন-এগ-প্রন-বিফ-পর্ক-ফিশ-হ্যাম এসবই নানান ক্যুইজিনে নিয়মিত রান্না হয় আর আমরা এসব খেয়েও থাকি চেটেপুটে। নতুন জায়গায় বেড়াতে গিয়ে অনেকে আবার খোঁজ করেন ভালো ভালো কি ধরনের খাবার পাওয়া যায় সেখানে, বলা বাহুল্য যে এর বেশিরভাগই আমিষ। রোল, নুডল, ফ্রাই, বার্গার, বিরিয়ানি, মোমো, এসব আজকালকার প্রচলিত খাবার আট থেকে আশি সবাইই খোঁজ করে নন ভেজ খাবারের সেকশনেই। কিন্তু আমিষ খাবার যে অনেক সাইড এফেক্টসও রয়েছে, তা আমরা অনেকেই এড়িয়ে যাই। নিয়মিত আমিষ খাবার রক্তচাপ, হার্টের রোগ, কোলেস্টেরল, মেদ, অবসাদ এই সমস্ত কিছু বাড়িয়ে দেয় ভীষণভাবে । অল্পবয়স থেকেই দেখা যায় নানান জটিল রোগ। ফলে খেতে হয় ওষুধও। অন্যদিকে আমিষ ছেড়ে দিয়ে নিরামিষ খাবার খেতে শুরু করলে তার কিন্তু নানান সুবিধাও রয়েছে যা ভোজনরসিক মানুষ মোটেই গুরুত্ব দিতে চান না। অথচ যেসব অভিনেতা-অভিনেত্রীদের পর্দায় দেখে আমরা মুগ্ধ হই আর নিয়মিত ভাবি কীভাবে ওঁদের মতন ফিগার পাওয়া সম্ভব, তাঁদের বেশিরভাগই কিন্তু নিরামিষাশী। অমিতাভ বচ্চন, শাহিদ কপুর, করিনা কপুর, শ্রীদেবি, হেমা মালিনী, রেখা, অক্ষয়কুমার, আমির খান, এসব নামিদামি সুপারস্টারেরা সবাই কিন্তু আমিষ ছেড়ে খাদ্যাভ্যাস শিফট করে নিয়েছেন আগাগোড়া নিরামিষেই। এঁদের দেখলেই বোঝা যায় আমিষ খাবার মেনু থেকে বাদ দিলে যথেষ্ট উপকার পাওয়া যায়। আমরাও কিন্তু জেনে নিতে পারি এরকম কয়েকটা সুবিধা যা নিরামিষে পাওয়া সম্ভব-
মেদের হ্রাস– শরীরের ওজন নিয়ে দুশ্চিন্তা করেন না এমন মানুষ বোধহয় খুব কমই আছেন। কিন্তু বেশি না ভেবে ননভেজ খাওয়া ছেড়ে দিলেই যে মুশকিল আসান হয়ে যায় তা বোধহয় অনেকেই জানেন না। আমিষ খাবারের মধ্যের উপাদান দেহের চর্বি বাড়িয়ে তোলে, ফলে দেখা দেয় নানান জটিল রোগ। অথচ নিরামিষ খাওয়া নিয়ম করে শুরু করলেই শরীরের বাড়তি মেদ ঝরে যাবে। ফিগারটাও হবে আকর্ষণীয়।
সুস্থ হৃদয়- আমিষ খাবার নিয়মিত খাবার ফলে সবচাইতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় আমাদের হার্ট। নানান সমস্যা দেখা দিতে শুরু করার পর একসময় হার্টের রুগি হয়ে পড়াটাও আশ্চর্যের কিছু নয়। অথচ নিরামিষের মধ্যে যে মিনারেল আর ভিটামিন রয়েছে তা হার্টের কোনও ক্ষতি তো করেই না বরং বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে প্রধান ভুমিকা নেয়। হৃদয় থাকে চাঙ্গা।
কর্কট রোগ তাড়ায়– আমিষ ছেড়ে নিরামিষে শিফট করার প্রধান কারণ হতেই পারে ক্যানসার প্রতিরোধের চেষ্টা। কারণ পৃথিবীর সমস্ত ডাক্তারই এই কথা স্বীকার করেছেন যে ভেজিটেরিয়ানদের শরীরে পুষ্টি আর ভিটামিনের ঠিকঠাক মাত্রা থাকবার ফলে তাঁদের শরীরে ক্যানসার প্রতিরোধের ক্ষমতা আমিষাশীদের তুলনায় অনেকটাই বেশি।
শ্বাসকষ্ট কমিয়ে ফেলে– এই মুহূর্তে যে অতিমারি গোটা দুনিয়াটাকে গ্রাস করে নিয়েছে, তাতে সবচাইতে বিপদের সম্ভাবনা তাঁদের যারা ক্রনিক শ্বাসের সমস্যায় ভোগেন নিয়মিত। অ্যাস্থমা কমাতেও কিন্তু সহায়ক নিরামিষ খাবার। সমীক্ষায় জানা গেছে গত এক বছরে এই ভয়েই অনেক মানুষ আমিষ পুরোপুরি ছেড়ে দিয়েছেন। রোগ নিবারণের চাইতে সাবধান হওয়াই তো ভালো, তাই না!
যৌন জীবনে উন্নতি- সম্প্রতি ইংল্যান্ডের কয়েকজন বিজ্ঞানী তাঁদের গবেষণায় দেখেছেন আমিষাশী মানুষজনের চাইতে নিরামিষ যাঁদের মেনুতে রয়েছে এমন মানুষের যৌন জীবন অনেক বেশি সফল। যৌনতার ক্ষেত্রে দুজন পার্টনারই নিরামিষাশী হলে সেক্সুয়াল লাইফ অনেক বেশি আনন্দদায়ক হতে পারে।
মানসিক শক্তি বৃদ্ধি – এটি সর্ব স্বীকৃত যে যারা নিরামিষ ভোজন আহার করেন তারা তুলনামূলক ভাবে নিজেদের ক্রোধ তথা অন্যান্য ষড়
রিপু অধিক নিয়ন্ত্রন করতে পারে ও এটিই মুখ্য কারন যে সাধু-সন্ন্যাসীরা নিরামিষ আহার ভোজন করেন।
ফলে বোঝাই যাচ্ছে, খাবার হিসেবে শাকসব্জি মাছমাংসের চাইতে অনেক বেশি জরুরি আর পুষ্টিকর। ভারতবর্ষেও যেসব রাজ্যের অধিকাংশ মানুষজন ভেজিটেরিয়ান তাঁদের মধ্যে রোগের আধিক্য অনেকটাই কম। কিন্তু তবুও লোকে লোভ করে বেশি নজর দেয় আমিষ খাবারেই, ফলে যা হবার তাই হয়। কিন্তু সময় থাকতে খাদ্যতালিকা থেকে আমিষ ছেঁটে ফেললে হতে পারে অনেকরকম সুবিধা, সেদিকেও নজর দেওয়া দরকার বৈকি!