আমাজন জঙ্গলের নাম শুনলে হাল আমলে মনে হতে পারে টলিউড নায়ক দেবের আমাজন অভিযানের কথা। কিন্তু বাস্তবে যে আমাজনের জঙ্গল সিনেমার রূপোলী পর্দার চেয়ে অনেক বেশি ভয়ানক আর রোমাঞ্চকর, তা ঘরে বসে কল্পনা করা যায় না একেবারেই। বাস্তবে আমাজনের জঙ্গলের পরতে পরতে মিশে আছে রহস্যের উন্মাদনা, সিনেমার নকল চাকচিক্যকে সে উন্মাদনা বলে বলে দশ গোল দেয়।

আমাজন
WWF

আমাজন অরণ্য দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন নদী বিধৌত অঞ্চলে অবস্থিত বিশাল বনভূমি। জলপ্রবাহের দিক থেকে আমাজন নদী বিশ্বের বৃহত্তম নদীর তকমা পেয়েছে। ৭০ লক্ষ বর্গকিলোমিটার অববাহিকা পরিবেষ্টিত এই অরন্যের প্রায় ৫৫ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার এলাকাটি মূলত আর্দ্র জলবায়ু দ্বারা প্রভাবিত। ৯ টি দেশ জুড়ে এই অরণ্য বিস্তৃত। আমাজন অরণ্য ৬০% রয়েছে ব্রাজিলে, ১৩% রয়েছে পেরুতে এবং বাকি অংশ রয়েছে কলম্বিয়া, ভেনেজুয়েলা, ইকুয়েডর, বলিভিয়া, গায়ানা, সুরিনাম এবং ফরাসি গায়ানা। পৃথিবী জুড়ে যে রেইনফরেস্ট তার অর্ধেক টাই এই অরণ্য নিজেই। নানা রকম প্রজাতির বাসস্থান হিসেবে সমৃদ্ধ এই আমাজন।এই বনে প্রায় ৩৯০ বিলিয়ন বৃক্ষ রয়েছে যেগুলো প্রায় ১৬০০০ প্রজাতিতে বিভক্ত। এহেন আমাজন অরণ্যের গহীন অন্দরে লুকিয়ে থাকা ৭টি রহস্যের খোঁজ রইল আজকের প্রতিবেদনে।

১) আমাজনের পিরানহা মাছ:

00 38 42 images
pinterest

আমাজন অরণ্যের মধ্যে বাস করে বহু প্রজাতির বহু প্রাণী। পশু পাখি থেকে শুরু করে কীট পতঙ্গ খামতি নেই কিছুতেই। তবে এখানকার সবচেয়ে ভয়ানক প্রাণী হল পিরানহা মাছ। আকারে খুব বড় না হলেও এই মাছ মাংসাশী। মরা মাছ বা পশু খেয়ে এরা সাধারণত দিন কাটায়। তবে হিংস্রতায় পিরানহা মাছ হার মানায় যে কোনো পশুকেই। এমনকি আস্ত মানুষকেও সামনে পেলে নিমেষে খেয়ে ফেলতে পারে পিরানহা মাছের দল।

২) আমাজনের অ্যানাকোন্ডা:

00 40 24 images
Liveabout

আমাজন জঙ্গলের কথা অ্যানাকোন্ডা ছাড়া ভাবাই যায় না। পৃথিবীর সবচেয়ে বড়ো সাপ এই অ্যানাকোন্ডা। আমাজনের গহীন অরণ্যের মাঝেই অ্যানাকোন্ডাদের নিত্য চলাফেরা। সাধারণত এরা ওজনে ৪০ টন এবং লম্বায় প্রায় ২৯ ফুট পর্যন্ত হতে পারে। তবে বিশালাকৃতি অ্যানাকোন্ডার কিন্তু কোনো বিষ থাকে না। সাধারণত এরা মানুষ বা অন্য প্রাণীকে শরীর দিয়ে পেচিয়ে মেরে ফেলে। এরপর ধীরে সুস্থে তা খায়।

৩) আমাজনের ইলেকট্রিকইল:

00 43 39 images
study.com

আমাজন জঙ্গলের অন্যতম রহস্য এখানকার ইলেকট্রিকইল। এটি এক ধরণের প্রাণী যারা জলের নীচে কাদার মধ্যে বাস করে। তবে মাঝে মধ্যেই ঘন কাদার ভিতর থেকে এরা উঠে আসে উপরের জলেও। এই ইলেকট্রিকইল কিন্তু ইলেকট্রিক শক দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। মানুষ হোক বা অন্য প্রাণী, ইলেকট্রিকইলের ধারে কাছে গেলে প্রায় ৬০০ ভোল্টের শক লাগতে পারে যে কারোরই। শোনা যায়, শুস্ক মরশুমে পুরুষদের লালা দিয়ে ইলেকট্রিকইল বাসা তৈরি করে, আর সেই বাসাতেই ডিম পাড়ে স্ত্রীরা। এভাবেই এদের প্রজনন হয়।

৪) আমাজনের নরখাদক:

00 44 25 images
amazon watch

ক্যানিবালস (cannibals) বা নরখাদক মানুষের কথা আমরা হয়তো পড়েছি গল্পের বইয়ের পাতায়। কিন্তু বাস্তবে ক্যানিবালসদের দেখা পাওয়া যেতে পারে আমাজন জঙ্গলে গেলে। শোনা যায়, আমাজন জঙ্গলেই নাকি এখনও বাস করে কিছু আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ, সভ্য জগতের সঙ্গে যাদের কোনো সম্পর্ক নেই। আর সুযোগ পেলে তারা খেয়ে থাকে মানুষের মাংসও। রহস্যে মোড়া আমাজনের গহীনে গিয়ে কত অত্যুৎসাহী অভিযাত্রী যে ক্যানিবালসদের কবলে পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন তার কোনো ঠিকানা নেই।

৫) আমাজনের ম্যাপিনগুয়ারি:

00 45 18 images
gaia

দেব অভিনীত ‘আমাজন অভিযানে’ আমরা যে কাল্পনিক প্রাণীকে দেখেছিলাম, বাস্তবের আমাজন অরণ্যে সেই বুনিপের অস্তিত্ব নেই। কিন্তু ম্যাপিনগুয়ারি নামের এক প্রাণীর অস্তিত্বের কথা বলে থাকেন এখানে বসবাসকারী কিছু উপজাতি গোষ্ঠী। তাঁদের কথা অনুযায়ী ম্যাপিনগুয়ারি হল ৭ ফুট লম্বা একটি বন্য প্রাণী। এদের গা থেকে নাকি এত তীব্র দুর্গন্ধ বেরোয় যে তাতে যে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। তবে এই প্রাণীর অস্তিত্বের প্রত্যক্ষ প্রমাণ এখনও পান নি বিজ্ঞানীরা।

৬) আমাজনের রক্তচোষা বাদুড়:

00 46 09 images
NPR Illinoise

রক্তচোষা বাদুড় আমাজন অরণ্যের অন্যতম ভয়ানক প্রাণী। এরা দিনের বেলায় অন্ধকারে থাকে, রাতে ঘুমন্ত গোরু ঘোড়া কিংবা অন্যান্য পশুদের গায়ে বসে এরা তাদের রক্ত চুষে খায়। এমনকি সুযোগ পেলে মানুষের রক্ত খেতেও ছাড়ে না এরা।

৯) আমাজনের বুলেট পিঁপড়ে:

00 47 41 images
owlcation

আমাজন অরণ্যের সম্ভবত সবচেয়ে ছোটো এবং সবচেয়ে ভয়ানক প্রাণী হল বুলেট অ্যান্ট বা বুলেট পিঁপড়ে। শুধু আমাজন জঙ্গলেই নয়, গোটা পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ানক প্রাণীদের মধ্যেই বুলেট পিঁপড়েকে অন্যতম হিসেবে ধরা হয়। এদের মুখের কাছে শক্ত ধারালো সাঁড়াশির মতো অংশ থাকে যার দ্বারা এরা মাংস খুবলে নিতে পারে। দলবদ্ধ ভাবে বুলেট অ্যান্ট যে কোনো বড় প্রাণীকেও ধরাশায়ী করে নিমেষেই।

দক্ষিণ আমেরিকার আমাজনের অরণ্যের জানা অজানা বিস্ময়ের কথা বলতে বসলে কেবল পাতার পর পাতা ভরতি হবে, কিন্তু তালিকা শেষ করা যাবে না।এহেন রহস্যে মোড়া আমাজন অরণ্য থেকেই পৃথিবীর মোট অক্সিজেনের প্রায় ৭% পাওয়া যায়। ফলে একে বলা হয় পৃথিবীর ফুসফুস।