নিজস্ব সংবাদদাতা- ইস্টবেঙ্গল এবং মোহনবাগান ছাড়াই এবারের আই-লিগ আজ থেকে শুরু হচ্ছে। স্বভাবতই মোহন-ইস্ট না থাকার কারণে বাংলার ফুটবল ভক্তদের মধ্যে আই-লিগ নিয়ে খুব একটা উত্তেজনা নেই। বেশ কয়েক বছর পর বাংলার তৃতীয় প্রধান মহমেডান স্পোর্টিং এবারের আই-লিগে সুযোগ পেলেও সেই দলের টালমাটাল অবস্থার কারণে রাজ্যের ফুটবলপ্রেমীদের মনে আই-লিগ নিয়ে উত্তেজনায় ভাটার টান লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
মহমেডান কি পারবে আই লিগে মোহন-ইস্টের ঐতিহ্য বহন করে নিয়ে যেতে? এই প্রশ্ন ফুটবল মহলে উঠলে যা উত্তর পাওয়া যাচ্ছে তাতে বাংলার ফুটবল প্রেমীদের উৎসাহিত হওয়ার মতো খুব একটা কিছু নেই। কারণ বছরের প্রথমে ইয়ান ল’কে দলের কোচ করে নিয়ে আসলেও সাদা কালো শিবিরের চিরাচরিত ঐতিহ্য মেনে মরশুমের মাঝপথেই তাকে বিদায় করেছেন মহমেডান কর্তারা। এমনকি মহমেডান সচিব প্রাক্তন কোচের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন তিনি দলের খবর বিপক্ষকে পাচার করে দিচ্ছিলেন!
এরকম টালমাটাল পরিস্থিতিতে মোহনবাগানের আই-লিগ জয়ী কোচ শঙ্করলাল চক্রবর্তীকে দলের টিডি হিসাবে নিযুক্ত করেছে মহমেডান। কোচ করেছে স্পেনের জোসে সেভিয়াকে। সেই সঙ্গে ডেনমার্কে জন্ম গ্রহণ করা বাংলাদেশ জাতীয় দলের ফুটবলার ও অধিনায়ক জামাল ভুঁইয়াকে এবারের আই-লিগে মহমেডানের হয়ে খেলতে দেখা যাবে। জামাল ভুঁইয়াকে নিয়ে কিছুটা হলেও আগ্রহ তৈরি হয়েছে সাদা কালো শিবিরের সমর্থকদের মধ্যে।
এই আই-লিগে মহমেডান দলে এক ঝাঁক বাঙালি ফুটবলারকে খেলতে দেখা যাবে। গতবারের আই-লিগ জয়ী মোহনবাগান দলের বেশিরভাগ বাঙালি খেলোয়ার এবারের আই-লিগে মহমেডানের হয়ে খেলবেন- শেখ ফৈয়াজ, অরিজিৎ বাগুই, তীর্থঙ্কর সরকারদের গায়ে এবারে আই-লিগে সাদা কালো জার্সি উঠছে। মূলত এদের ওপর নির্ভর করেই মহমেডান দল করা হয়েছে। তবে গোল পাওয়ার জন্যে মহমেডান তাকিয়ে আছে ঘানার স্ট্রাইকার মহম্মদ ফাতাউয়ের দিকে।
মোহনবাগানের শেষ আই-লিগ জয়ী দলের ক্যাপ্টেন গোলকিপার শিল্টন পাল এবারে আই লিগে চার্চিল ব্রাদার্সের তেকাঠি সামলাবেন। গত আই-লিগের সেরা ফুটবলার এবং মোহনবাগানের প্রাণ ভোমরা জোসেবা বেইতিয়া এবার খেলছেন পাঞ্জাব এফসিতে। তিনি জানিয়েছেন মোহনবাগানের মতোই পাঞ্জাব এফসিকে আই-লিগ চ্যাম্পিয়ন করাই তার একমাত্র লক্ষ্য।
ফুটবল বিশেষজ্ঞরাও বেইতিয়ার পাঞ্জাব এফসিকেই সবচেয়ে প্রস্তুত দল বলে মনে করছেন। কারণ গত দু’মাস ধরে এই দলটি যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের কাছে পাঁচ তারা হোটেলে ডেরা বেঁধে আছে কলকাতার পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেবে বলে। প্রসঙ্গত আই-লিগ সফলভাবে করার জন্য এআইএফএফ কর্তারা ফুটবলার, কোচ, রেফারি সহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কড়া জৈব সুরক্ষা বলয়ের মধ্যে রেখেছেন। যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন, মোহনবাগান মাঠ, কিশোর ভারতী স্টেডিয়াম এবং কল্যাণীর মাঠ নিয়ে মোট এই চার যায়গায় ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে এবারের আই-লিগের সবকটি ম্যাচ হবে।
মোট ১১ টি দল এবারের আই-লিগে অংশগ্রহণ করছে। গতবারের দলগুলির মধ্যে মোহনবাগান এবং ইস্টবেঙ্গল যেমন আইএসএল খেলছে, তেমনি সেই শূন্যস্থান পূরণ করার জন্য মহমাডান এবং সুদেবা এফসি’কে সুযোগ দেওয়া হয়েছে। মহমেডানের লক্ষ্য এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আই-লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়া এবং আগামী বছর আইএসএল খেলা। সেই লক্ষ্যেই তারা বিদেশী সংস্থা বাঙ্কারহিলের সঙ্গে গাঁটছড়া পর্যন্ত বেঁধেছেন।
আই-লিগ চ্যাম্পিয়নের জন্য পুরস্কার মূল্য ১ কোটি টাকা এবং রানার্স পাবে ৬০ লক্ষ টাকা। প্রতিটি ম্যাচের ম্যান অফ দ্য ম্যাচকে ফেডারেশনের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার টাকা দেওয়া হবে। যদিও ফেডারেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে এবারের আই-লিগ আয়োজন করার জন্য তাদের খরচ দ্বিগুণ হয়ে ১১ কোটি টাকা হয়েছে। মূলত জৈব সুরক্ষা বলয় তৈরি করে ক্লাবগুলোকে পাঁচতারা হোটেলে রাখার ফলেই খরচের এই বাড়বাড়ন্ত। ফুটবল সমালোচকদের মতে আই-লিগ কার্যত দেশের দ্বিতীয় ডিভিশন ফুটবল লিগে পরিনত হয়েছে! তবে মহমেডান যদি সাফল্য পেতে শুরু করে তাহলে অনেকটাই দর্শক আনুকূল্য ফিরে পাবে আই-লিগ।