অন্য গ্রহে কি প্রাণ আছে? এই কথাটা কিছুদিন আগেও একটা বড় প্রশ্ন ছিল | কিন্তু এখন ব্যাপারটা একটু অন্য রকম | এখন যা অবস্থা তাতে অন্য গ্রহে প্রাণ না থাকলেই সেটা আশ্চর্য্যের ব্যাপার হবে | কারণটা বলছি |

আমাদের সৌরজগতের বাইরের গ্রহ

পৃথিবীর বাইরে নিশ্চিত করে  গ্রহের আবিষ্কার হয় প্রথম ১৯৯২ সালে | এর পরবর্তী কালে বেশ দ্রুততার সঙ্গে আমাদের সৌর জগতের বাইরে গ্রহের আবিষ্কার হতে থাকে | বিশেষত ২০০৯ সালে কেপলার স্পেস টেলিস্কোপ মহাকাশে পাঠাবার পর থেকে | ২০১৮ সালে এর জীবন কাল শেষ হবার আগে অবধি এটি ২৬৬২ টি exoplanet (এক্সপ্লানেট) বা সৌর জগতের বাইরের গ্রহের আবিষ্কার করেছে | ১ নভেম্বর ২০২০ পর্য্যন্ত সবসুদ্ধ ৪৩৭০ টি এমন বাইরের গ্রহের সন্ধান পাওয়া গেছে| কথা হচ্ছে এই গ্রহ আকাশের খুব ছোট একটি জায়গা অনুসন্ধান করে পাওয়া গেছে | বিজ্ঞানীরা হিসেব করে দেখেচেন যে আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে আছে প্রায় ১১ বিলিয়ন মানে ১১০০ কোটি গ্রহ যেগুলি হ্যাবিটেবল জোন বা বসবাস যোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে | মিল্কিওয়ে আমাদের নিজস্ব গ্যালাক্সি অর্থাৎ যে গ্যালাক্সি তে আমরা থাকি | এই সম্বন্ধে একটু বিশদে বলি | প্রাণ থাকার জন্যে জল থাকা অত্যন্ত জরুরি | গ্রহটি যদি তার সূর্যের থেকে খুব বেশি দুরে বা কাছে থাকে তবে জল ঠান্ডায় জমে কঠিন হয়ে যাবে বা গরমে বাস্প হয়ে উড়ে যাবে | এই দুই এর মাঝখানে কিছুটা দুরত্বে জল তরল অবস্থায় থাকতে পারে | সেই দুরত্ব কেই বলা হচ্ছে হ্যাবিটেবল বা গোল্ডিলক জোন | এই জায়গায় গ্রহ থাকলে সেখানে জল থাকবে তরল অবস্থায় যেটা নাকি অনেকটা আমাদের পৃথিবীর মত | এই সব গ্রহে বুদ্ধিমান প্রাণী থাকা খুবই সম্ভব | সুতরাং বসবাস যোগ্য ১১০০ কোটি গ্রহের মধ্যে আর একটিতে ও প্রাণ না থাকাটাই আশ্চর্য্য জনক | মিল্কিওয়ে ছাড়া বাইরের আরো কোটি কোটি গ্যালাক্সির আরো হাজার হাজার কোটি গ্রহের কথা আমি ছেড়েই দিলাম |

এখনো পর্য্যন্ত যে কটি গ্রহ আবিষ্কৃত হয়েছে তার মধ্যে ৫৫ টি  গ্রহ হ্যাবিটেবল জোন এ আছে | ২০২০ এর সেপ্টেম্বর মাসে এমন ২৪ টি গ্রহ আবিস্কৃত হয়েছে যে গুলিকে বলা হচ্ছে super habitable | অর্থাৎ এগুলির অবস্থান এমন যে এখানে প্রাণ থাকার সম্ভাবনা এমন কি পৃথিবীর চেয়ে বেশি |

Habitable Zone 1
চিত্র সৌজন্যে manyworlds.space

কি দেখে বোঝা যাবে অন্য গ্রহে প্রাণ আছে কিনা

কোনো গ্রহে প্রাণ আছে কি না সেটা জানার উপায় কি ? প্রথমত সেখানে জল থাকতে হবে | দ্বিতীয়ত যদি তার বাতাবরণে অক্সিজেন পাওয়া যায় তাহলে ৯০% সম্ভাবনা সেখানে প্রাণ আছে | কারণ বাতাসে অক্সিজেন আসে photosynthesis বা সালোক সংশ্লেষ প্রক্রিয়া দ্বারা যেটা একমাত্র প্রাণ থাকলেই উত্পন্ন হতে পারে | এর সঙ্গে  গ্রহের বায়ুমন্ডলে ওজোন ও কার্বন ডাই অক্সাইড ও সেই গ্রহে  প্রাণ থাকার চিহ্ন |

জেমস ওয়েব মহাকাশ দুরবীন

563px James Webb Space Telescope 2009 top
চিত্র সৌজন্য en.wikipedia.org

আমাদের কাছে এখনো পর্য্যন্ত এমন কোনো শক্তিশালী দুরবীন বা টেলিস্কোপ নেই যার দ্বারা এত দুরের কোনো গ্রহের পরিবেশে জল বা অক্সিজেন আছে কিনা বিশ্লেষণ করে জানা যায় | কিন্তু সেদিন শেষ হতে চলেছে | অতি বিশাল জেমস ওয়েব মহাকাশ দুরবীন ( James Webb Space Telescope ) পাঠানো হবে ২০২১ সালের ৩১ এ অক্টোবর | ৬.৫ মিটার বা ২১ ফিট ব্যাস এর এই দুরবীন টি হাবল টেলিস্কোপের চেয়ে প্রায় আড়াই গুন বড় | পৃথিবী থেকে কয়েক লক্ষ্য মাইল  দুরে মহাকাশে এটি থাকবে | স্পেকট্রস্কপির সাহায্যে এই দুরবীন সব বহু বহু দুরের সৌরজগতের বাইরের সব গ্রহের পরিবেশ বিশ্লেষণ করবে| জানতে পারা যাবে সেখানে জল বা অক্সিজেন আছে কিনা | দূর গ্রহের ছবি তুলে বুঝতে পারা যাবে সেখানকার গ্রীষ্ম ও শীতের পার্থক্য, সেখানে উদ্ভিদ আছে কিনা | এসব থেকে প্রায় নিশ্চিত হয়ে যাওয়া যাবে সেই সব গ্রহে প্রাণ আছে কিনা | সুতরাং আগামী দশকের কোনো একদিনের মধ্যেই হয়তো আমরা খবর পেয়ে যাব কোনো সুদুর গ্রহের প্রানের উপস্থিতির | তখন চলবে সেই গ্রহ সম্বন্ধে আরো গবেষণা ও সেখানকার প্রাণীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা |

ব্যাপারটা সত্যি রোমাঞ্চকর |

এ বিষয়ে আরো পড়ুন: https://www.jwst.nasa.gov/content/science/origins.html