“কন্টাক্ট লেন্স” এই শব্দটির সাথে আমরা কমবেশি সবাই পরিচিত। চশমা যাদের নিত্যসঙ্গী, তাদের কাছে কন্টাক্ট লেন্স খুবই সহজ ও কার্যকর একটি সম্বল। কিন্তু এখনকার সময়ে চশমা ব্যবহার না করা সত্ত্বেও অনেকেই কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করেন এবং এটি কতটা নিরাপদ সেটি না জেনেই দিনের পর দিন ব্যবহার করে চলেছেন। সব সময় চশমা ব্যবহার করতে পছন্দ করেন না, স্টাইল এর জন্য কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করতে চাইছেন। কন্টাক্ট লেন্স নেয়ার আগে কিছু বিষয় জেনে রাখা উচিত। স্টাইলে চক্করে না পরে যদি নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হন, তবে চটজলদি জেনে নিন এই ৫টি বিষয়।
১. কন্টাক্ট লেন্স কয় প্রকার ও কি কি ও এদের ব্যবহারঃ
কন্টাক্ট লেন্স নেয়ার আগে এটি কয় প্রকার জানতে হবে আপনাকে। কোন ভাগটি আপনার ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত সেটিও আপনাকে জানতে হবে। কন্টাক্ট লেন্স প্রধানত দুই প্রকার। প্রথমটি পাওয়ার কন্টাক্ট লেন্সেস ও দ্বিতীয় টি নন পাওয়ার কন্টাক্ট লেন্সেস। দুটির নাম এর মাধ্যমেই দুটির পার্থক্য বোঝা যাচ্ছে। পাওয়ার কন্টাক্ট লেন্স প্রধানত যাদের চোখে পাওয়ার রয়েছে তাদের জন্য। নন পাওয়ার কন্টাক্ট লেন্স যাদের চোখে কোন পাওয়ার নেই অথচ একটু অন্য রকম লুক দিতে চাইছেন তাদের জন্য। পাওয়ার কন্টাক্ট লেন্স ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ব্যবহার করতে হয়। নন পাওয়ার কন্টাক্ট লেন্স ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াও ব্যবহার করা যেতে পারে। নন পাওয়ার কন্টাক্ট লেন্স বিভিন্ন রঙের পাওয়া যায়। এই লেন্স যে কেউ ব্যবহার করতে পারে।
২. পাওয়ার কন্টাক্ট লেন্সঃ
আমরা আগেই জেনেছি পাওয়ার কন্টাক্ট লেন্স শুধুমাত্র চোখে পাওয়ার রয়েছে এমন ব্যক্তিরা ব্যবহার করতে পারে। সাধারণত চশমা থেকে কিছুক্ষণের বিরতির জন্য পাওয়ার কন্টাক লেন্স ব্যবহার করা হয়। পাওয়ার কন্টাক্ট লেন্স বিভিন্ন রকমের,বিভিন্ন দামের পাওয়া যায় এবং আপনি চাইলে এটি আপনি অন্য রঙেরও ব্যবহার করতে পারেন। পাওয়ার কন্টাক্ট লেন্স ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ব্যবহার করা একদমই উচিত নয়। আপনি আপনার ব্যবহারের সময় অনুসারে এই লেন্স কিনতে পারেন। আগে লেন্স ব্যবহার করার জন্য বহু বহু নিয়ম মেনে চলতে হতো কিন্তু এখন সময়ের সাথে সাথে সবকিছুরই পরিবর্তন হয়েছে। পাওয়ার কন্টাক্ট লেন্স এখন আপনি আপনার সময় অনুসারে পেয়ে যেতে পারেন। তিনটি সময় অনুসারে আপনি লেন্স পেতে পারেন। ১২ ঘন্টা ৮ ঘন্টা ৬ ঘন্টা ও ১-২ ঘন্টার। যতগুলো ঘন্টা আপনি ব্যবহার করতে চান সেই হিসেবে আপনি লেন্স পেয়ে যাবেন। আপনি যেরকম ভাবে চান অর্থাৎ এক বছর তিন বছর দু দিন বা এক সপ্তাহ দিন হিসেবেও আপনি লেন্স পেয়ে যাবেন। আপনাকে শুধু মাত্র আপনার দিন ও কাজ করবার ঘন্টা ঠিক করতে হবে। প্রত্যেক লেন্সের সাথেই আপনি একটি লিকুইড সলিউশন ও লেন্স কিট পেয়ে যাবেন। লেন্স ব্যবহার করার জন্য সব সময় মনে রাখবেন লেন্স যেখানে সেখানে খুলে রেখাতে পারবেন না। পরেরদিন ব্যবহারের জন্য আপনাকে সলিউশনে ভিজিয়ে রাখতে হবে। এই সলিউশনই আপনার লেন্সকে পরিষ্কার রাখতে ও দীর্ঘ সময় পর্যন্ত ব্যবহার করতে সাহায্য করবে।
৩. নন পাওয়ার কন্টাক্ট লেন্সঃ
নন পাওয়ার কন্টাক্ট লেন্স সাধারণত যাদের চোখে পাওয়ার নেই তারাই ব্যবহার করতে পারেন। নিজের লুককে চেঞ্জ করার জন্য এই লেন্স ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই লেন্স গুলির স্থায়িত্ব বেশি দিনের হয়না। নন পাওয়ার লেন্স বিভিন্ন রঙের পাওয়া যায়। নন পাওয়ার কন্টাক্ট লেন্স সিনেমায় নায়ক নায়িকা, মডেলদের ব্যবহার করতে দেখা যায়। এই লেন্স ব্যবহার করা করা খুব সহজ। নন পাওয়ার কন্টাক্ট লেন্স পাওয়ার কন্টাক্ট লেন্স এর তুলনায় একটু সস্তা হয়। মার্কেটের এই লেন্সের চাহিদা যেমন প্রচুর ঠিক তেমনই এই লেন্সের বিক্রিও প্রচুর। এই লেন্স যেকোনো চশমার দোকানেই পাওয়া যায়। এই লেন্সের বিশেষত্ব হলো এগুলি ব্যবহার করার জন্য ডাক্তারের পরামর্শের প্রয়োজন হয় না ও খোলা পরা খুব সহজ প্রকৃতির হয়। তবে এগুলি ব্যবহার করার পদ্ধতি পাওয়ার কন্টাক লেন্সের মতোই। এই লেন্সগুলিও লিকুইড সলিউশনে ভিজিয়ে রাখতে হয়।
৪. পাওয়ার ও নন পাওয়ার কন্টাক্ট লেন্সের উপকারিতাঃ
পাওয়ার কন্টাক লেন্স সাধারণত ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ব্যবহার করা একদমই উচিত নয়। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী আপনি আপনার পাওয়ার লেন্স নির্বাচন করুন। পাওয়ার কন্টাক্ট লেন্স চশমার থেকে কিছুটা হলেও বেশি উপকারী ধরা হয়, কেন না লেন্স আমাদের চোখের মনির সঙ্গে পুরোপুরি যুক্ত হয়ে থাকে যার ফলে আমরা 180 ডিগ্রি ভিসুয়াল দেখতে সক্ষম হই। যেটি চশমা সাহায্যে কখনোই সম্ভব নয়। চশমা কেবলমাত্র আমাদের চোখের উপরের অংশ অর্থাৎ 90 ডিগ্রির কাছাকাছি ভিসুয়াল দেখাতে সক্ষম। এছাড়াও চশমা পরলে মুখের অর্ধেক অংশই চশমায় ঢেকে থাকে। এই কিছু কিছু কারণে পাওয়ার কন্টাক্ট লেন্স আমাদের জন্য উপকারি। নন পাওয়ার কন্টাক্ট লেন্স আমাদের লুককে আরও স্টাইলিশ করে তোলে। কোন পার্টিই হোক বা বিয়েবাড়ি স্টাইলিশ লুকে বাজিমাত করা খুব সহজ হয়ে ওঠে। মার্কেটে কিছু কন্টাক্ট লেন্স রয়েছে যেগুলো খুবই জনপ্রিয় ও ব্যবহার করা সুবিধাজনক। যেমন- বোসচ+লম্ব, জণসন অন্ড জণসন প্রভৃতি।
৫. পাওয়ার ও নন পাওয়ার কন্টাক্ট লেন্সের অপকারিতাঃ
যে কোন জিনিসের যেমন উপকারিতা রয়েছে ঠিক তার অপকারিতাও রয়েছে। পাওয়ার কন্টাক্ট লেন্স বেশি ব্যবহারের ফলে চোখের উপর বিশেষ রকমের অসুবিধা হতে পারে। অনেকক্ষেত্রে দেখা যায় পাওয়ার কন্টাক্ট লেন্স ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নেয়া হলেও লেন্স ব্যবহারকারীর কোনভাবেই কাজে আসছে না। পাওয়ার কন্টাক্ট লেন্স বেস্ট দামি হওয়ার কারণে খুব কম মানুষই ব্যবহার করতে পারে। নন পাওয়ার কন্টাক্ট লেন্স অনেক রকম দূষিত ক্যামিকেলসে ভরপুর থাকে। যার ফলে পরবর্তীকালে চোখের বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। যে কোন লেন্সই ঠিকভাবে পরিষ্কার না থাকার জন্য চোখে ইনফেকশনেরো আশঙ্কা থাকতে পারে।
তাহলে উপরের আলোচনা থেকে এটাই জানা যায় যে কোন লেন্স আপনি ব্যবহার করুন না কেনো সবার আগে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করুন। লেন্স খোলা ও পড়ার সময় সাবধানে ব্যবহার করবেন। লেন্স পরিষ্কার রাখার জন্য সবসময় সলিউশনে ভিজিয়ে রাখবেন। আমাকে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না কিন্তু আপনি কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করতে চান কিনা এবং কেন চান।